চলে গেলেন আলহাজ্ব জমসেদ আখন্দ

চলে গেলেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জমসেদ আখন্দ। ইন্নালিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
বার্ধক্যজনিত জটিলতায় বেশ কয়েকদিন যাবত তিনি সিলেট আল হারামাইন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তীতে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বাদ আসর তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। উনার মৃত্যুতে শোকাহত আমরা- সুনামগঞ্জ সদর তথা মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষ।
সমাজ জীবনে জ্ঞানী এই ব্যক্তিত্ব জনহিতকর বিভিন্ন কর্মকান্ডের সফল সম্পাদনসহ গ্রামীন সাংস্কৃতিক পটভূমিতে যেমন মানুষের শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা কুড়িয়েছেন, তেমনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে এলাকার আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন করে অর্জন করেন মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস।
উল্লেখ্য, তৎকালীন অবসরপ্রাপ্ত মেজর ইকবাল হোসেন চৌধুরী’ যখন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় খাদ্যমন্ত্রী তখন জনাব জমসেদ আখন্দ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে মোল্লাপাড়া ইউ/পি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হয়েই তিনি নাগরিক সকল সুবিধা বঞ্চিত জরাজীর্ণ মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের রাস্তাঘাট ব্রীজ কালভার্ট, খেলার মাঠ, হাওরে বাধ নির্মাণসহ নানান উন্নয়নমুখী কর্মকান্ডে উদ্যোগী হন। অকাল বন্যার কবল থেকে লক্ষ লক্ষ একর বোরো ফসল রক্ষার জন্য দেখার হাওরের বেরিবাধ নির্মাণ তার মধ্যে অন্যতম। উনার সময়ে তৈরী শান্তিগঞ্জ বাজারের মাঠটি আজো ইউনিয়নের একমাত্র খেলার মাঠ হিসেবে ছেলে যুবকদের খেলা-ধূলার চাহিদা পূরণ করে একটি সুস্থ সমাজ গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। যে প্রশংসার অদ্যাবধি তিনিই একমাত্র দাবীদার।
মাননীয় খাদ্যমন্ত্রী’র একান্ত সহযোগিতায় তখনকার সময়ে (১৯৮৮ সালে) যা কল্পনারও অতীত ছিল- হাওরপাড়ের প্রত্যন্ত এই ইউনিয়নে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে তিনি অত্র এলাকার সাধারণ মানুষের নির্মল ভালোবাসার যোগ্য প্রতিদান দিয়েছিলেন। উনার প্রতি শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতায় যা আজো আমাদের বিনয়ী করে তুলে।
সামাজ জীবনে মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা, রাজনীতিতে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জনে তিনি যেমন সফল একজন মানুষ তেমনি ব্যক্তিজীবনেও তিনি এক গর্বিত পিতা। হাওর অধ্যুষিত- সুবিধা বঞ্চিত প্রত্যন্ত একটি অজো পাড়াগায়ে থেকেও সন্তানদের যিনি পড়ালেখা করিয়েছেন। এমনকি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীট ঢাকা ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত। যার ফল স্বরূপ উনার বড় ছেলে হুমায়ুন কবির আখন্দ (শাহীন) বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের গর্বিত অংশীদার। বর্তমানে যিনি বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রলায়ের যুগ্ম সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন। ছোট ছেলে আলমগীর কবির আখন্দ এবং মেজো মেয়ে মিতা আখন্দ স্বপরিবারে ইংল্যান্ডে সেটেলড। উনার ২ ছেলে ৩ মেয়ের সবাই পড়াশুনা করে পারিবারিক,সমাজ এবং কর্মজীবনে আজ সফলতার দ্বারপ্রান্তে। আর এ সবই সম্ভব হয়েছে উনার নিরলস মেধা, শ্রম আর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়।
আজ উনি নেই। মহান সৃষ্টিকর্তার ডাকে সাড়া দিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। এই শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।আজ শনিবার বাদ যোহর উনার শেষ নামাযের জানাজা অনুষ্ঠিত হলো। আমরা উনার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহ্ যেন উনার সকল ভুলত্রুটি ক্ষমা করে উনাকে বেহেশতের মেহমান করে নেন। আমীন।
পরিশেষ, একজন জমসেদ আখন্দ আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন উনার বর্ণাঢ্য জীবনের কর্মচঞ্চল নিবেদিতপ্রাণ একজন সফল মানুষ হয়ে। মধ্যবিত্ত গ্রামীণ সমাজের সর্বোচ্চ স্বপ্নবান একজন আদর্শ পিতা হিসেবে। অত্র এলাকার প্রতিটি পারিবারিক, সামাজিক সফলতার গল্পে সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে মিশে থাকুক জমসেদ আখন্দের নাম।
আফরোজ রায়হান/সুনামগঞ্জমিরর/এসএ