খেসারত আওয়ামী লীগকেই দিতে হবে: ফখরুল

কলঙ্কিত নির্বাচন আর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে যে ভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আকড়ে থাকার চেষ্টা করছে তাতে করে আওয়ামী লীগকেই খেসারত দিতে হবে বিএনপিকে নয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার বিকাল ৫ ঘটিকায় নীলফামারী বিএনপি কার্যালয় চত্তরে আয়োজিত সমাবেশে একথা বলেন।

তিনি বলেন, গত ৫ই জানুয়ারির নজিরবিহীন কলঙ্কিত নির্বাচনে নৈতিক ও রাজনৈতিক ভাবে পরাজিত আওয়ামী লীগ এখন দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। দেশে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে পরিকল্পিত ভাবে ১৮দলের নেতাকর্মীর বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করছে। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, যৌথবাহিনীর অভিযানে সারা দেশে ২২৭ জন দলীয় নেতাকর্মী নিহত হওয়া ছাড়াও জামায়াতে ইসলামীসহ ১৮ দলের জোটভূক্ত অন্যান্য দলের ৬৭ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। যৌথবাহিনীর অভিযানে সারা দেশে ২৯৪ জন নেতাকর্মী নিখোঁজ ও গুম হয়েছেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশ আজ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কবলে। সাতক্ষীরা, নীলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বর্তমান ফেসিবাদী অবৈধ সরকার রাষ্ট্রীয়যন্ত্রকে ব্যবহার করে সন্ত্রাস শুরু করেছে। ৫ই জানুয়ারির পাতানো নির্বাচনের পূর্বমহুর্তে থেকে বিগত সরকার যে ভাবে খুন-গুম-নির্যাত শুরু করেছে তাতে করে সারা দেশে ভয়ানক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহরে হামলা মামলার আসামীদের পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হচ্ছে। তাদের লাশ রাস্তার ধারে পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বিএনপি নেতা রব্বানী ও আতিক কে হত্যা করা হয়েছে এটা কিসের আলামত। আসামীদের বিচারের আওতায় না এনে হত্যা করা হচ্ছে। তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তিনি ভাল মানুষ। গুনি মানুষ। তাকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি। তিনি নাটক করেন। বাকের ভাই হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে ওনার। কিন্তু তিনি নাটকে যা বলেন, বাস্তবে তার করেনা। তিনি নূরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রতিহিংসার রাজনীতি ছেড়েদিন। মির্জা ফখরুল আরো বলেন, সরকার বিরোধী দলের নামে সন্ত্রাসের অভিযোগ এনে বিরোধী দলকে নির্মূলের পরিকল্পনা হাতে নিয়ে এগুচ্ছে। তা হতে দেয়া যায়না। তিনি বলেন, বিএনপি এভাবে ধ্বংস করা যাবেনা। দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ ভোট কেন্দ্রে যায়নি। এটা কোন নির্বাচন নয়। ৫ ভাগ ভোটও পরেনি। ভোট কেন্দ্রে কুত্তা বসে ছিল। এটা অবৈধ সরকার। দেশ-বিদেশে কোথাও এর গ্রহনযোগ্যতা নেই। আমেরিকাসহ সকল আর্ন্তজাতিক মহল নির্বাচনকে অবৈধ বলেছে। আইনশৃংখলা বাহীনি, বিজিবি ও পুলিশ দিয়ে ভোটবাক্স ভর্তি করে বাকশালী কায়দায় একদলীয় সরকার কায়েম করা হয়েছে। তিনি বলেন আওয়ামী লীগ ও হাসিনার অধীনে কখনই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি বলেন আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন ও দেউলিয়া হয়ে পড়ায় এখন বন্ধুক আর পিস্তল দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। তিনি বলেন এসরকারকে বৈধ বলা যায়না। আমরা জনগের কাছে যেতে চাই। জনগনকে সাথে নিয়েই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ চাপে পড়লে মূসরে যায়। আবার ফাঁক ফেলে ফাল দিয়ে ওঠে। মানুষের মোনের ভাষা বুঝুন, তারা কি চায়। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে, মির্জা ফখরুল বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সাথে কোন বিরোধ নেই। জামায়াতে ইসলামী ১৮ দলের সাথেই আছে এবং থাকবে।

তিনি বর্তমান সরকারকে নমরুদ ও ফেরাউন এর সাথে তুলনা করে বলেন, বন্ধুক দিয়ে স্বৈরাচার এরশাদও ক্ষমতায় থাকতে পারেননি, আপনারও পারবেন না। পদ্মা সেতু গিলে গেয়েছেন। ডেসটিনি, রেলওয়ে, শেয়ারবাজারও গিলে খেয়েছেন। এবার দেশটাকে গিলে কাওয়ার পায়তারা করছেন। ভোট এলেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের নাটক সাজানো হয় রাজনৈতীক ভাবে ফায়দা লোটানোর জন্য। ঠাকুরগাঁও এর ঘটনা বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ঘটনা উল্লেখ্য করে মির্জা আলমগীর বলেন, সেটাকে নিয়েও রাজনীতি করা হয়েছে। ঠাকুরগাঁও-এ যারা নিহত হয়েছেন, তারা বিএনপির নেতাকর্মী। তিনি ১৪ই ডিসেম্বর আসাদুজ্জামান নূরের গাড়ি বহরে হামলা মামলার নিহত আসামী গোলাম রব্বানী ও আতিক হত্যার বিচার এবং ওই ঘটনায় আরো নিখোঁজ ৩জনের হদিস দাবি করে অবিলম্বে খুন-গুম বন্ধের দাবি জানান। তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত বিএনপি জনগনকে সাথে নিয়েই রাজপথে থাকবেন। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এ্যাড. মিজানুর রহমান চৌধুরীর সবাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন জেলা কমিটির সদস্য সচিব শামসুজ্জামান জামান।

x