চাকরি হারাবে ২০ শতাংশ পোশাক শ্রমিক
২০১২ সালে তাজরীন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে দুর্ভাগ্য যেন পিছু ছাড়ছে না পোশাক শ্রমিকদের। চলতি বছরেও প্রায় ২০ শতাংশ পোশাক শ্রমিকের চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন না করতে পেরে দেশে ছোট ও মাঝারি আকারের প্রায় ৪০০ কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। আর এর ফলে চাকরি হারাবে প্রায় ১০ শতাংশ শ্রমিক।
অন্যদিকে বড় কারখানাগুলো খরচ কমিয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য আধুনিক প্রযুক্তির আমদানি করছে। আর এতে প্রাথমিক প্রায় সব কাজই করা হবে মেশিনের মাধ্যমে। ফলে প্রাথমিক পর্যায়ের শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা না থাকায় চাকরি হারাবেন তারা। আর এই নতুন প্রযুক্তির কারণে আরও ১০ শতাংশ শ্রমিক চাকরি হারাবে।
আর এই ২০ শতাংশ হিসেবে প্রায় ৮ লাখ শ্রমিক চাকরি হারাতে বসেছে ২০১৪ সালে, জানায় বিজিএমইএ সূত্র।
আধুনিক প্রযুক্তি আনয়নে শ্রমিক ছাটাইয়ের সম্ভাবনা আছে বলে স্বীকার করেন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ আজীম।
শহীদুল্লাহ আজীম বাংলানিউজকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি যে পরিমাণ বেড়েছে তা প্রকৃতপক্ষে মালিকদের বহন করা সম্ভব না। কারণ মজুরি বাড়লেও উৎপাদন বাড়ছে না। ফলে লাভ তো দূরের কথা, মালিকদের খরচই উঠছে না। আর তাই আমরা এখন উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে আসছি। বেশি বেতন দেবো তা ঠিক কিন্তু সে ক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিক হতে হবে। আর উন্নত প্রযুক্তির মেশিনে লোকবল কম লাগবে।
আগে কোনো কারখানায় যেখানে এক হাজার লোক লাগত আধুনিক প্রযুক্তি আনয়নে সেখানে প্রাথমিক ভাবেই একশ’ শ্রমিক কম লাগবে। ফলে খরচ কিছুটা কমে আসবে।
অন্যদিকে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে শ্রমিক পক্ষ। কিন্তু সেক্ষেত্রে ছাটাই নয় বরং শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করার দায়িত্বও মালিকদের নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন’র সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা।
তপন সাহা বাংলানিউজকে বলেন, যদি মালিকরা ছাটাইয়েই আগ্রহী হয় তাহলে আইনগতভাবে শ্রমিকদের যা পাওনা আছে তা পরিশোধ করতে হবে। আইনি যে কোনো পদক্ষেপে শ্রমিকরা সহায়তা করবে মালিকপক্ষকে। কিন্তু বেআইনি কিছু করার চেষ্টা করা হলে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামবে।
পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন নতুন কলকারখানা বাড়িয়ে ছাটাই হওয়া শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তপন সাহা।
গত বছরের নভেম্বরে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার পর তা বাস্তবায়ন শুরু হয় ডিসেম্বর থেকে। কিন্তু শুরু থেকেই বাড়তি মজুরি দেওয়া সম্ভভ হবে না বলে জানিয়ে আসছিলো মালিকপক্ষ। আর তাতে খরচ কমাতে শ্রমিক ছাটাই করা হচ্ছে প্রথম থেকেই।
তার অংশ হিসেবে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার পর প্রায় ২০ হাজার হেলপার ইতোমধ্যেই ছাটাই হয়ে গেছে বলে জানা যায় শ্রমিক সংগঠনগুলোর সূত্র থেকে।
২০১৩ সালে রানা প্লাজার ধসে দুর্ঘটনায় সহস্রাধিক শ্রমিক নিহত হওয়ার পর শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে চলে আসে।
আন্দেলনে নামেন শ্রমিক পক্ষ। নানা ঘাত প্রতিঘাতের পর ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করে নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করে। তারপর থেকে সৃষ্টি হয়েছে নানা জটিলতা। চলছে মালিক-শ্রমিকপক্ষের টানাপোড়েন।