মার্চে চালু হচ্ছে ঢাকা-সিলেট-শিলং বাস

ঢাকা-সিলেট-শিলং বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের উদ্যোগের অংশ হিসেবে আন্তদেশীয় এই রুটে বাস চালু হচ্ছে। বুধবার ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক এ করিম। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা ও দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, মার্চেই নতুন এই আন্ত রুটে বাস চালুর সম্ভাবনা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে তারিক এ করিম বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে আগামী দিনে সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গভীরতায় শিগগির বাংলাদেশ ও ভারত এক নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। ঢাকা-শিলং বাস চালু সেই উদ্যোগেরই অংশ।

তারিক এ করিম সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। ব্যাখ্যা করেন প্রতিবেশী দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের বিষয়গুলোও।

দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের নতুন সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রীর অতি সাম্প্রতিক ভারত সফর ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতীয় উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশও ভারতীয় বিনিয়োগ আকর্ষণে বিশেষ সুবিধা দিতে প্রস্তুত। গিগগিরই ভারতীয় উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ পরিবেশ দেখতে বাংলাদেশ সফর করবেন।
তারিক করিম বলেন, ঐতিহাসিকভাবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে জলপথে বাংলাদেশের ভালো যোগাযোগ ছিল। সিংহভাগ ব্যবসা-বাণিজ্য হতো জলপথে। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে নানা কারণে এটি এখন নেই। কিন্তু বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতির ফলে ঢাকা-সিলেট-শিলং বাস যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর বিষয়টি সামনে আসে কয়েক বছর আগে। এই বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শেষ হয়েছে। দুই দেশের মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্তটি অনুমোদন পেয়েছে।

তারিক করিম আরো বলেন, ঢাকা-সিলেট-শিলং রুটে বাস চলাচল শুরুর বিষয়ে কয়েক বছর আগে আলোচনার সূচনা হয়েছিল। এখন এটি বাস্তবতা পেতে চলেছে। এখন দিনক্ষণ ঠিক করে বাস যোগাযোগ চালু করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। মার্চেই এই রুটে বাস চলাচল শুরুর ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তারিক করিম আরো বলেন, ঢাকা-শিলং বাস চলাচল শুরু হলে এটি সফলতা পাবে। এই রুটে মেঘালয়, আসামসহ ভারতের কয়েকটি রাজ্যের মানুষ ঢাকা হয়ে কম সময়ে কলকাতায় যেতে পারবেন। বাংলাদেশের মানুষও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য আসাম, মেঘালয়, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল ও ত্রিপুরায় সহজেই যাতায়াতের সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশি পণ্যের বাজার খুঁজে নিতে পারবেন।

হাইকমিশনার বলেন, আরো বেশি সীমান্ত হাট চালুর বিষয়ে আলোচনা চলছে দুই দেশের মধ্যে। বর্তমানে চালু দুটি সীমান্ত হাটের মধ্যে একটি মেঘালয় ও অপরটি আসাম সীমান্তে অবস্থিত। হাটগুলো ভালো চলছে উল্লেখ করে হাইকমিশনার আরো বলেন, দুই দেশের ক্রেতা-বিক্রেতারা উন্মুক্তভাবে পণ্য কেনাবেচা করতে পারছেন। আন্তর্জাতিক সীমান্তেও সীমান্ত হাট বসানোর প্রস্তাব নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।

তারিক করিম সংবাদ সম্মেলনে জানান, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা তার রাজ্যের সীমান্তে ২২টি সীমান্ত হাট চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু এগুলোর সাফল্য বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের কথা ভাবা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে তারিক করিম আরো বলেন, দেশভাগের আগে এই অঞ্চলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ জলপথ ছিল পণ্য আনা-নেওয়ার জনপ্রিয় রুট। রুটটি আবারও চালু করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

হাইকমিশনার বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বিমানসেবা চালুর ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু সেই ঘাটতিও শিগগিরই পূরণ হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ বিমান ভারতের এই অঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে বিমান পরিষেবা চালুর বিষয়েও উদ্যোগ নিচ্ছে বলে তিনি জানান। তারিক করিম বলেন, ‘আমরা আমাদের ঐতিহাসিক বন্ধন পুনরাবিষ্কারের উদ্যোগ শুরু করেছি। আমরা অবশ্যই সফল হব।’

সংবাদ সম্মেলনে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা বলেন, ‘বাংলাদেশের কূটনীতির ডালপালা এখন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও ছায়া ফেলেছে। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক সূত্রে প্রোথিত। আমরা পৃথক সীমানায় বসবাস করলেও পরস্পরকে গভীরভাবে অনুভব করি।’ শিলং-সিলেট-ঢাকা বাস চলাচল শুরুর মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের আওতায় ঢাকা-কলকাতা, ঢাকা-আগরতলা ও ঢাকা-শিলিগুড়ির মধ্যে বাস চলাচল করছে কয়েক বছর ধরে।

x