সুরমায় নৌকার আগুনে নিহতের সংখ্যা ১১
সুনামগঞ্জের সুরমা নদীতে শ্রমিকবাহী ইঞ্জিনচালিত নৌকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১১ জনে দাঁড়িয়েছে।
সিলেট ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার ও উদ্ধার তৎপরতার টিম লিডার জাবেদ হোসেন মো. তারিক এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৯টা পর্যন্ত আরও চারটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ১১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হলো।
উদ্ধারকৃত মরদেহের মধ্যে পাঁচটি শিশু এবং ছয়জন প্রাপ্তবয়স্ক। এদের মধ্যে একজন নারীর লাশ সনাক্ত করা গিয়েছে। তার নাম তার নাম রোকেয়া (৩০)। তিনি নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুড়ি উপজেলার পাঁচহাট গ্রামের আবুল হাশেমের স্ত্রী।
বাকিদের শরীর আগুনে পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় তারা পুরুষ নাকি নারী তা বোঝা যায়নি।
এদিকে, সিলেট থেকে উদ্ধার কর্মীরা মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে।
মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
এ ছাড়াও শিশুসহ কমপক্ষে 1০ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।
সোমবার রাত আটটার দিকে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের প্রতাপপুর এলাকায় শ্রমিকবাহী নৌকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর কিছুক্ষণ পর নৌকায় তিনজনের অগ্নিদগ্ধ লাশ দেখতে পাওয়া যায়।
পরে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পুড়ে যাওয়া ছয়টি মরদেহ উদ্ধার করেন।
সোমবার দিনগত রাত পৌনে দুইটার দিকে সিলেট ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার জাবেদ হোসেন মো. তারিক এ প্রতিবেদককে এ তথ্য জানিয়েছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সন্ধ্যার পর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ থেকে ইঞ্জিনচালিত ওই নৌকায় করে নারী, শিশুসহ শতাধিক শ্রমিক কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার উদ্দেশে রওনা হন।
রাত ৮টার দিকে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের প্রতাপপুর এলাকার সুরমা নদীতে পৌঁছালে হঠাৎ করে নৌকায় রাখা চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।
এ সময় আগুনে পুড়ে এক নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়।
অপরদিকে, অন্যান্য যাত্রীরা সাঁতরে নদীর উভয় তীরে ওঠেন।
নৌকা থেকে সাঁতরে তীরে আসা খালিয়াজুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কল্যাণপুর গ্রামের ইয়াসিন আলী জানান, তার ১১ বছরের ছেলে তানিমকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
দোহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নানু মিয়া জানিয়েছেন, অর্ধডুবন্ত অবস্থায় ১৮ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের সিলেট এমএজি ওসমানি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাতে দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম নেওয়াজ জানান, নৌকায় আগুন লাগার ঘটনায় শিশুসহ কমপক্ষে ১০ জন নিখোঁজ রয়েছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাশ দাফনের জন্য নিহতদের পরিবারকে বিশ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
তিনি জানান, ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আইনূর আকতার পান্না ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম মাইনুদ্দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিতি রয়েছেন এবং জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
তিনি আরও জানান, উদ্ধারকৃত লাশগুলো ছাতকের বেতুরা গ্রামের নদীর পাড়ে রাখা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. হারুন-অর-রশিদ জানান, দোয়ারাবাজার থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে।