এ লজ্জা কোথায় রাখব?
‘হাসনরাজা লোক উৎসব’ ব্যর্থতায় ব্যর্থতায় সয়লাব হয়ে যে বদনাম কুড়িয়েছে সেটা জানতে পারলাম পত্রিকা আর ফেইস বুকের বদৌলতে।
হাসনরাজা লোক উৎসবের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে আমি সুনামগঞ্জে ছিলাম। প্রোগ্রামের সামন দিয়ে যাওয়া আসার সময় মাইকে যে গান বাজছিল শুনে মনে হয়েছে এদেরকে ধরে নিয়ে স্টেইজে তুলে দেয়া হয়েছে। যা গানের শ্রী! কণ্ঠ একদিকে মিউজিক আরেকদিকে। মনে হয়েছে হাসন রাজার গানকে টর্চারিং করে করে ঝাঁঝরা করে দেয়া হচ্ছে। উৎসবে উঁকি দেয়ারও ইচ্ছে হয়নি।
দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে নিউজ পড়লাম ‘আইনজীবী সমিতির হাসন লোক উৎসব বর্জন’। আমার বিচারে এটা হাসন রাজার গানকে বর্জন নয় আয়োজকদের ব্যর্থতার দায়ে এবছরের উৎসবকে বর্জন। আর ফেইসবুকে দেখলাম আজমল সায়েমের আইডিতে সমস্ত প্রোগ্রাম জুড়ে ভাওতাবাজির কেচ্ছা। আজমল সায়েম উপস্থাপকের বরাত দিয়েই বলেছে। আমি অবশ্য উপস্থাপককে শতভাগ দায়ি করছি না। উপস্থাপককে আয়োজকরা যা শিখিয়ে দেবেন তাই উপস্থাপিত হবে এটাই স্বাবাবিক।
‘হাসন রাজা লোক উৎসব’ নিয়ে ঘটমান সত্য ঘটনায় আসছি এবার। হাসন রাজার গানের শিল্পী হাসরত্ন আব্দুল লতিফকে দিয়েই শুরু করছি। কারণ হাসনরত্নই এবছরের উসবের খবর দিয়েছিলেন আমাকে।
মোবাইলের রিংটোনে ঘুম ভাঙল। মোবইলের স্ক্রিনে হাসনরত্ন লেখা উঠেছে। রিসিভ করে বললাম, স্লামালিকুম আংকেল।
ওপাশ থেকে হাসনরত্ন বললেন, ভাতিজা একটা সুখবর আছে।
কিতা কইনছাইন আংকেল।
তোমার অনুমতি ছাড়াই ‘হাসনরাজা লোক উৎসব’ কমিটিত তোমার রাখছি।
ভালা করছইন।
তোমার কোন আপত্তি নাইতো?
আপনে রাখছইন আমার আপত্তি থাকতো কেনে।
তোমার প্রকাশনীত কোন সময় আইবায়?
দুপুরের দিকে।
আমি আইয়া বিস্তারিত মাতমুনে।
যেমন কথা তেমন কাজ। হাসনরত্ন আব্দুল লতিফ এলেন। বসলেন। বললেন, ২০১৪’র হাসন রাজা লোক উৎসব কমিটি গঠন অইতো। তোমারে কোন পোস্ট দিলে খুশি অইবায়?
জিজ্ঞেস করলাম, সভাপতি কে?
লতিফ চাচা বললেন, (কী)ঋণ দেয়ান। (এই মুহূর্তে নাম মনে হচ্ছে না।)।
আমি সাথে সাথে বললাম, ই কমিটিতে আমি নাই। হাসনরত্ন আব্দুল লতিফ সভাপতি অইলে আমারে সাধারণ সদস্য দিলেও আমি মহা খুশি।
– তাইনতো হাসনরাজার পরিবারের লোক।
এর লাগিঔতো আপত্তি। এরার কথায় আর কাজে মিল নাই। কোনানো যে আমরারে বেছবো টেরই পাইতামনায়। মোবাইল কোম্পানী বড় অংকের টেখা দেয় দেশের বড় ব্ড় শিল্পী আইন্যা গান গাওয়াইবার লাগি। এরা ছদই বদই দিয়া গান গাওয়াইয়া টেখা বাছায়। আর হাজার হাজার হাসনরাজা ভক্ত হতাশ অইয়া ফিরিয়া যাইন।
আমার কথা শুনে হাসনরত্ন চলে গেলন।
প্রোগ্রামের আগের দিন সুনামগঞ্জে গেলাম। পৌরবিপণীতে সাপ্তাহিক সুনামকণ্ঠ অফিসে বসে আড্ডা দিচ্ছি। পত্রিকার সম্পাদকের টেবিলে রাখা চিঠি দেখে পড়লাম এবং হাসলাম। আমার হাসি দেখে বিজনদা বললেন, হাসছেন কেন?
বললাম, চিঠির সাথে বাস্তবের মিল খুঁজে পাবেন না। গত বছরের লোক উৎসবে বড় গলায় কে একজন বার বার বললেন, আজকের প্রোগ্রামের বিশেষ আকর্ষণ দেশে বিদেশে যার সুনাম রয়েছে বাংলা গানের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী পলাশ। সবাই হৈ হৈ করে উঠল। সবাই ভাবল এতোদিন পলাশের গান ক্যাসেটে শুনেছেন এবার সামনা সামনি শুনবেন। সব শেষে এমন এক পলাশকে স্টেইজে আনার হলো দূর থেকে মনে হলো পলাশই হবে। পলাশের এংগেলেই স্টেইজে উঠলেন শিল্পী। হাসন রাজার গাইন গাইলেন বাদ্যযন্ত্র ছাড়া। আমার মত সবাই হয়তো ভাললেন ‘নকল পলাশ’ তো কি হয়েছে গান যদি ভাল গায় অপেÿা করাটা সার্থক হবে। দ্বিতীয় গান ধরলেন বাউল সম্রাট আব্দুল করিমের জনপ্রিয় গান ‘এই মিন্নতি করিরে সোনা বন্ধু ভুইল না আমারে রে’ মিউজিক বাজার সাথে সাথে শিল্পী লাইনচ্যুত হলেন। স্কেল আউট, পরে স্কেল ঠিক করার জন্য গানের স্থায়ী দুইবার গাওয়ার পরিবর্তে তিন বার রিপিট করার সাথে সাথে তাল কাটল। যাচ্ছে তাই অবস্থা। অধিকাংশ দর্শন লোক উৎসব ছেড়ে পালালেন। যারা থাকলেন তাদের জন্য ‘নকল পলাশ’ লালন গীতি গাইলেন।
এবারও তাই হবে।
বিজনদা কিছুই বললেন না। তার পরও আমি থামলাম না।
বললাম, বড় শিল্পী আনতে বড় অংকের টাকা লাগে। এবারও হাসনভক্তরা হতাশ হবেন।
‘হাসনরাজা লোক উৎসবে এ কোন ভাওতাবাজি’ শিরোনামের আজমল সায়েমের ফেইসবুক আইডিতে পোস্ট করা লেখা পড়ে হতাশ হওয়া ছাড়া কিছুই করার নেই। সেলিম চৌধুরীর নাম টানা হেচড়া করে দর্শককে বোকা বানানো ঠিক হয়নি।
এসব আমাদের জন্য লজ্জার।
এ লজ্জা কোথায় রাখবো?!