৯৭ উপজেলায় ভোট উৎসব বুধবার
চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনকে নিয়ে কেবল উৎসব উদ্যাপনের কথাই ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটারদের নির্ভয়ে কেন্দ্রে এসে এই ভোট উৎসবে যোগ দিতে ইসি তাই উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।
এদিকে এ নির্বাচনে সকল দলের সমর্থিত প্রার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হওয়ায় স্বস্তির জায়গাও বেড়েছে ইসির। ইসি মনে করে এতে নির্বাচন উৎসবমুখর হবে এবং ভোটার উপস্থিতিও হবে উল্লেখ করার মতো।
জাতীয় নির্বাচনে সহিংসতার পর উপজেলা নির্বাচনে তার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে মনে করে ইসি। উৎসবমুখরভাবে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সিইসি।
এ নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ ভোটারদের নির্বিঘ্ন পরিবেশ তৈরিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের আইন লঙ্ঘন বরদাশত করা হবে না। তবে দলীয় সমর্থনে উপজেলা নির্বাচনে রাজনৈতিক মাত্রা পেলেও কিছু করতে পারছে না ইসি।
ইসির এই মনোভাবের মধ্যদিয়েই বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রথম ধাপের ৯৭ উপজেলার নির্বাচন। প্রথম ধাপে তিন পদে এসব উপজেলায় মোট ১ হাজার ২৭৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছে ৪৩২ জন, ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী ৫১৩ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ৩২৯ জন।
অবশ্য সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে, প্রথম ধাপের প্রার্থীদের মধ্যে ১২২ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা রয়েছে। প্রথম ধাপের মোট ভোটার ১ কোটি ৬৪ লাখ ৭৮ হাজার ১৭২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮১ লাখ ৯১ হাজার ৫৩৭ জন, মহিলা ভোটার ৮২ লাখ ৮৬ হাজার ৬৩৫ জন।
ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৬ হাজার ৯৯৫টি, ভোট কক্ষ ৪৩ হাজার ২৯০টি। প্রিজাইডিং অফিসার প্রতি ভোটকেন্দ্রে একজন করে ৬ হাজার ৯৯৫ জন। সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার প্রতি ভোটকক্ষের জন্য এক জন করে মোট ৪৩ হাজার ২৯০ জন। পোলিং অফিসার সংখ্যা ৮৬ হাজার ৫৮০জন দায়িত্ব পালন করবেন।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটের ৩২ ঘণ্টার আগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সব ধরনের প্রচারণা বন্ধের বিধান রয়েছে। এ হিসাবে প্রথম ধাপের ভোটের আগে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গত সোমবার মধ্যরাতেই বন্ধ হয়েছে মিছিল-মিটিংসহ সব ধরণের প্রচার-প্রচারণা।
দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও উপজেলা নির্বাচনে তারা অংশ নিচ্ছে। যে কারণে উপজেলা নির্বাচন বরাবরের চেয়ে এবার হয়ে উঠেছে আরো জমজমাট। ফলে এ নির্বাচনকে ঘিরে বিরাজ করছে অন্য আমেজ।
ইসি সচিবালয়ের সহকারি সচিব আশফাকুর রহমান জানান, নির্বাচনের ৩২ ঘণ্টা পূর্বে সকল প্রচার-প্রচারণা বন্ধ হয়েছে। তা অব্যাহত থাকবে নির্বাচনের পর ৬৪ ঘন্টা পর্যন্ত। কেউ আইন ভঙ্গ করলে কারাদন্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হবে। সর্বোচ্চ ক্ষমতা ইসির রয়েছে প্রার্থিতা বাতিল।
নির্বাচন কমিশন প্রথম দফায় ১০২টি উপজেলার তফসিল ঘোষণা করলেও সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতার কারণে রংপুরের চারটি উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। প্রথম দফার পীরগঞ্জ উপজেলার ভোট ১৯ তারিখ থেকে পিছিয়ে পিছিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি করা হয়।
সুষ্ঠু অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে সেনাবাহিনী নির্বাচনের আগে ও পরে মিলিয়ে মোট পাঁচদিন তারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে তারা। প্রতি উপজেলায় ১ প্লাটুন করে সেনাবাহিনীর সদস্য টহল দেবে। পাশাপাশি প্রতি উপজেলায় সেনাবাহিনীর দুই থেকে তিনটি গাড়ি থাকবে। সঙ্গে সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার ও একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। এছাড়া মোবাইল ফোর্স হিসেবে পর্যাপ্ত পরিমাণ ৠাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকছে।
প্রতি কেন্দ্রে একজন পুলিশ (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার একজন (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার ১০ জন (মহিলা-৪, পুরুষ-৬ জন) এবং আনসার একজন (লাঠিসহ) ও গ্রাম পুলিশ একজন করে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবে। পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল ও হাওর এলাকায় এ সংখ্যা শুধুমাত্র পুলিশের ক্ষেত্রে দু’জন হবে। পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল ও হাওর এলাকায় এ সংখ্যা শুধু পুলিশের ক্ষেত্রে দু’জন হবে। ১৯ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ৩৮৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৯৭ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে ভোটের আগের দিন মঙ্গলবার প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা ব্যালট পেপারসহ মালামাল গ্রহণ করে কেন্দ্রে নিয়োজিত আইন শৃঙ্খলাবাহিনী সদস্যসহ অবস্থান করছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সুবিধাজনকভাবে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় চার ব্যবস্থা
উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় নেওয়া হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য গোলযোগ ঠেকাতে চারটি সমস্যা চিহ্নিত করে সুপারিশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশনে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে চার সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- সম্ভাব্য গোলযোগপূর্ণ কেন্দ্রগুলোয় আইন শৃঙ্খলা জোরদার করার পাশাপাশি ভোটের ৪৮ ঘন্টা আগে থেকে পরের দুই দিন পর্যন্ত গোপন নজরদারির ব্যবস্থা নিতে হবে। সম্ভাব্য হামলাকারীদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তাদের গ্রেফতার করার পাশাপাশি অন্যদেরও নজরদারিতে রাখতে হবে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে হবে। ভোটের আগে-পরে এলাকায় স্থানীয়ভাবে পাহারা দিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বলতে হবে। প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় কোনো ধরনের সহিংসতা ও গোলযোগের শঙ্কা করছে না নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
৩২ উপজেলায় ৫৯০ নির্বাচনী কর্মকর্তা নজরদারিতে
দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসারদের মধ্যে ১৯ জেলার ৩২ উপজেলায় ৫৯০ জন কর্মকর্তাকে নেতিবাচক হিসেবে চিহ্নিত করে তালিকা দিয়েছে সংস্থাটি। তাদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। সরকার বিরোধী গোষ্ঠীর প্রতি আনুগত্য, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সমালোচিত, বিভিন্ন অনিয়ম ও নেতিবচাক কর্মকাণ্ডে অতীতে জড়িত ছিল এবং তাদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নেতিবাচক ভূমিকা পালন করেছেন। ইসি সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ভোটে নিরপেক্ষভাবে সবাইকে কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। কোনো ধরনের ব্যতয় ঘটলে বা পক্ষপাতিত্ব করলে বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৯১ অনুসারে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ইসি।