ভোটগ্রহণ সম্পন্ন, চলছে গণণা
আজ সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া দেশের ৯৭টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ বিকাল ৪টায় শেষ হয়েছে। এসব উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলায় বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীরা জাল ভোট, ব্যালটবাক্স ছিনতাই ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগে নির্বাচন বর্জন করেছে।
এসব নির্বাচনী এলাকায় সরকারি দলের ক্যাডারদের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে জালভোট দেওয়ার অভিযোগও করা হয়েছে। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে করা হলেও পুলিশ ও স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচন বয়কটকারী প্রার্থীরা। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি কম ছিল।
জানা গেছে, ভোলার লালমোহন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক জালভোট, কারচুপি, কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া, বিএনপি সমর্থিত ভোটারদের ভোট প্রাদনে বাধা এবং বহিরাগতদের দিয়ে ভোট দেয়ার অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় লালমোহন উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের মার্শাল হিমু’র পৌরসভার বাসভবনে সংবাদ সন্মেলনের মাধ্যমে তারা এই ঘোষনা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি সমর্থিত সকল প্রার্থীরা দাবি করেন, নির্বাচনের শুরু থেকেই সকল কেন্দ্রে তারা এজেন্ট দেয়। ওই এজেন্টদেরকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের নির্দেশে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে তারা জাল ভোট দেয়। আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা এসময় বহিরাগতদের দিয়ে কেন্দ্র দখলের চেষ্ঠা করে। বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর এজেন্টরা বাঁধা দিলে তাদের উপর হামলায় করে। একারণে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় ও নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করলেও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা নির্বাচন বর্জন করে।
ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহের শৈলকুপায় বিএনপি’র প্রার্থী রাকিবুল হাসান খান দিপু ভোট বর্জন করেছেন। বুধবার সকাল ১১টার সময় শৈলকুপা শহরের কবিরপুর নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে কারচুপির প্রতিবাদে স্থানীয় বিএনপি’র পক্ষ থেকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার উপজেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
রাকিবুল হাসান খান অভিযোগ করেন, আওয়ীলীগ সমর্থিত প্রার্থী মোশারফ হোসেন শিকদাদের লোকজন ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে জাল ভোট প্রদান, ব্যালট পেপার ছিনতাই, এজেন্টদের বের করে দেওয়া এবং কর্মীদের মারপিট করছে। এছাড়া ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
পাবনা: পাবনার সুজানগর উপজেলা নির্বাচন বয়কট ও বৃহস্পতিবার সকাল সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি’র চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজারী জাকির হোসেন চুন্নু পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, মারধর, ৬৩ কেন্দ্রের ৪০টি কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে নির্বাচন বয়কট ও হরতালের ঘোষণা দেওয়া হয়। জেলা বিএনপি’র দফতর সম্পাদক এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, স্থানীয় নাজিরগঞ্জ বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সুজানগর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আযম বিশ্বাস জানান, ভোটারদের বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। নিজেরাই কেন্দ্রে ঢুকে জাল ভোট মারছে।
তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল কাশেম এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হাজারী জাকির হোসেন চুন্নু তার পরাজয় নিশ্চিত জেনেই এই নাটক সাজিয়েছেন।
বরিশাল: বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। বুধবার সকাল পৌনে ১০টায় সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন তারা।
গৌরনদী প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আবুল হোসেন মিয়া (মোটরসাইকেল) উপজেলার সবগুলো কেন্দ্রে ভোট কারচুপি চলছে। পাশাপাশি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকদের মারধর ও সাধারণ ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগে বাধা দেয়া হচ্ছে। তাই কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে একই অভিযোগ করেন, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী লোকমান হোসেন খান (দোয়াত কলম), বিএনপির আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী নুর আলম হাওলাদার (কাপ পিরিচ), বিএনপি সমর্থিত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মেহেদী হাসান (তালা), বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী জহির সাজ্জাদ (উড়োজাহাজ) ও বিএনপি সমর্থিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তাসলিমা পারভীন (কলস)। কারচুপির বিষয়টি অস্বীকার করে গৌরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম প্রতিটি কেন্দ্রে সুষ্ঠভাবে ভোট গ্রহণ চলছে।
শরিয়তপুর: গোসাইরহাট উপজেলায় ভোট কারচুপির অভিযোগে নির্বাচন বর্জন করেছেন বিএনপি প্রার্থী সাহেদ পারভেজ আব্বাজ মোল্লা (মোটর সাইকেল)। লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি নির্বাচন বর্জন করেছেন বলে জানা গেছে।
বুধবার বেলা ১২টার দিকে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী সাহদ উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুন নাহারের কাছে লিখিত বক্তব্যে এ নির্বাচন বর্জন করেছেন।
চেয়ারম্যান প্রার্থী সাহেদ পারভেজ বলেন, সকাল ৮টায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু হয়। নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই চলছি। এর একটু পরেই বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের ভোট প্রদানে বাধা দেয়া হয় এবং ভোট কারচুপি করা হয়। সাতমাটিয়া মাথুয়াখালীসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট কারচুপি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি জানান, দলীয় সিদ্ধান্তে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি এ নির্বাচন বর্জন করেছে।
সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি সরকার দলীয় প্রার্থী মোজাম্মেল হক বকুলের বিরুদ্ধে ভোট কেন্দ্র দখল ও সন্ত্রাসের অভিযোগ করে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেন। (1 News BD)