আইকন ক্রিকেটার সাকিবের তিন ‘কলঙ্ক’
বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রথম সুপারস্টার আশরাফুল। ফিক্সিং কান্ডে নিজেকে জড়িয়ে দেশের ক্রিকেটের প্রথম কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টিকর্তাও তিনি! আশরাফুলের পরের সময়টাতে মুশফিক-তামিমদের ছাপিয়ে শুধুই দ্যূতি ছড়িয়েছেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের অধিনায়ক, বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার থেকে শুরু করে অসাধারণ সব পারফরমেন্সের সৌজন্যে টাইগার ক্রিকেটের ‘আইডল’ থেকে হয়ে যান বিশ্বক্রিকেটেরও নতুন নায়ক।
কিন্তু চাঁদেরও যে কলঙ্ক থাকে! পৃথিবীর চিরন্তন এই সত্যটাকে আশরাফুলের পর নতুন করে আবার প্রমাণ করলেন সাকিব নামের বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের আধুনিক দূত। শ্রীলংকার বিপক্ষে দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচে প্রদর্শন করলেন অশোভনীয়, ক্ষমার অযোগ্য আচরণ। তার এই কদর্যভঙ্গি এতটাই স্পর্শকাতর ছিল যে কোনভাবেই মেনে নিতে পারেননি দেশের কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ। সাকিবের এই কুৎসিৎ আচরণ ক্ষমা করেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও। তবে আশ্চর্য হলেও সত্য এটাই যে এই প্রথম সাকিবের এমন আচরণ নয়।
প্রায় তিন বছর আগে, ২০১১ বিশ্বকাপেও সাকিব আল হাসান প্রদর্শন করেছিলেন এমন বিতর্কিত-দৃষ্টিকটু-অশোভনীয় আচরণ। তাও সেবার তিনি ছিলেন দলের অধিনায়কের ভুমিকায়! ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই ম্যাচে মাত্র ৫৮ রানেই অলআউট হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তখন গ্যালারিতে থাকা এক দর্শককে অশালীন ভঙ্গি দেখিয়েছিলেন সাকিব। দুই আঙ্গুল তুলে তার সেই প্রদর্শিত অঙ্গভঙ্গি হতবাক করেছিল গ্যালারিতে থাকা হাজার হাজার ভক্ত-অনুরাগীদের। দেশের ক্রিকেটের গায়ে মেখেছিল কলঙ্কের কালির দাগও!
কিন্তু সেবার অধিনায়কের কোন শাস্তি পেতে হয়নি। স্রেফ একটি চিঠির মাধ্যমে সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল সাকিবকে। সেই বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদাভাবে বসেছিল টেকনিক্যাল কমিটি। কিন্তু সেই সভায় ওই আচরণ প্রসঙ্গে সাকিবকে কেউ একটি প্রশ্নও করেননি। তবে তখন এর জন্য অনেকেই বিসিবিতে দ্বিমুখী নীতির কারণকেই দায়ী করেছিল।
প্রথম ঘটনাটি ঘটিয়েও ক্ষান্ত হননি সাকিব আল হাসান। গত মাসে সিলেটে আম্বার টি-২০ টুর্নামেন্টেও এক দর্শকের কলার চেপে ধরেছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু এই বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে তেমনভাবে উঠে আসেনি। এড়িয়ে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেটবোর্ডর হস্তক্ষেপও। কিন্তু বারবার ছাড় পেয়ে যাওয়া সাকিব আল হাসান শ্রীলংকার বিপক্ষে যা করলেন সেটা যেন সকলেরই ভাবনাতীত।
বৃহস্পতিবার শ্রীলংকার বিপক্ষে দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচে অতীতের সাকিব যেন ফিরলেন নতুন করে। এবার আরও এককাঠি সরেস। যেটা ইতোমধ্যেই দেশ-বিদেশের আলোচনায় ‘হট কেক’ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।
তবে এবার আর ২২ গজে ঐশ্বর্যভরা সাকিবকে বরদাশত করেনি বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ড। সিরিজের মাঝেই শুনানিতে ডেকে তিন ম্যাচ সাসপেন্ড করে সাকিবকে। সেইসঙ্গে জরিমানা করা হয় তিন লাখ টাকা। পরে ভুলের জন্য অনুতপ্ত প্রকাশ করে ক্ষমাও চেয়েছেন সাকিব আল হাসান।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের নেয়া এমন সিদ্ধান্ত দেশের ক্রিকেটে এটাই প্রথম। এর আগে কোন ক্রিকেটারকেই শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে একসঙ্গে এত ম্যাচ এবং এত টাকা জরিমানা করা হয়নি। তবে এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাবেক ক্রিকেটাররা। তাদের মতে, ক্রিকেটকে লজ্জায় ফেলানো যে-ই হোক না কেন, তাকে শাস্তি পেতেই হবে। এ থেকে উদীয়মান ক্রিকেটাররাও শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে তুলে ধরবে বিশ্বমঞ্চে।