মোবাইল মেসেজের দিন শেষ?
মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপের মতো অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার বাড়ছে। ছবি: ফোর্বস।এক হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারে হোয়াটসঅ্যাপকে কিনছে ফেসবুক; যার অর্থ ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং জনপ্রিয় হচ্ছে। তবে কি টেক্সট মেসেজ বা মোবাইল বার্তার দিন শেষ? এ বছর কি তবে টেক্সট বার্তা ছেড়ে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ার সময় হতে চলেছে? হোয়াটসঅ্যাপ ছাড়াও মোবাইলে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিংয়ের ক্ষেত্রে স্ন্যাপচ্যাট ও ভাইবারের মতো অ্যাপ্লিকেশনগুলোর জনপ্রিয়তা সে ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সিএনবিসির অনলাইনের খবরে বলা হয়, ফেসবুকের হোয়াটসঅ্যাপকে কিনে নেওয়ার ঘটনাটি এখন পর্যন্ত ফেসবুকের পক্ষে সবচেয়ে বেশি খরচে কোনো প্রতিষ্ঠান কেনার ঘটনা। এর আগে ১০০ কোটি ডলারে ইনস্টাগ্রাম কিনেছিল ফেসবুক। বাজার-বিশ্লেষকদের মতে, মার্ক জাকারবার্গের এতো বেশি খরচ করে হোয়াটসঅ্যাপ কেনার উদ্দেশ্য হচ্ছে মোবাইল মেসেজিংয়ের বাজারে অন্যতম খেলোয়াড় হতে চাওয়া।
টেক্সট না ইনস্ট্যান্ট মেসেজ, কোনটি টিকে থাকবে? বাজার-বিশ্লেষকেরা জানাচ্ছেন, মোবাইলে পয়সা খরচ করে প্রচলিত বার্তা পাঠানোর বিষয়টি এখন পড়তির দিকে। ইনস্ট্যান্ট মেসেজিংয়ের কারণেই কমতে শুরু করেছে প্রচলিত বার্তা পাঠানোর পরিমাণ।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বাজার-বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ডিলোইটি গত জানুয়ারি মাসে পূর্বাভাস দিয়েছিল, এ বছর মোবাইলে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং সার্ভিস (এমআইএম) টেক্সট মেসেজিংয়ের (এসএমএস) চেয়ে দ্বিগুণ হবে।
এদিকে, মোবাইল মেসেজিংয়ের ক্ষেত্রটিতে গুগলও নজর দিচ্ছে। ফেসবুকের আগে মোবাইল মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন হোয়াটসঅ্যাপকে এক হাজার কোটি মার্কিন ডলারে কিনতে চেয়েছিল গুগল। কিন্তু ফেসবুক এক হাজার ৯০০ কোটি ডলার দিয়ে কিনতে চাওয়ায় হোয়াটসঅ্যাপকে আরও বেশি দাম দিতে রাজি ছিল গুগল।
মোবাইল মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে দ্রুত জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকা হোয়াটসঅ্যাপকে কিনতে ফেসবুক শেষ পর্যন্ত এক হাজার ৯০০ কোটি ব্যয় করে। গত বৃহস্পতিবার এই কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।
প্রশ্ন উঠছে হোয়াটসঅ্যাপের পেছনে এত খরচ কেন করল ফেসবুক? জাকারবার্গের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন ১০ লাখ মানুষ হোয়াটঅ্যাপ ডাউনলোড করছেন এবং এই অ্যাপটির ৪৫ কোটি ব্যবহারকারী রয়েছেন। ফেসবুক দাবি করেছে, হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহার করে যত সংখ্যক বার্তা পাঠানো হচ্ছে তা সারা বিশ্বে টেলিকমে এসএমএসের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
টেক্সট বার্তা কমে যাওয়া প্রসঙ্গে ডিলোইটির টেলিকমবিষয়ক গবেষক পল লি জানান, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত টেক্সট মেসেজের জনপ্রিয়তা দেখা গেছে কিন্তু এখন দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং।
মোবাইল ফোন অপারেটর আলেকট্রার ভাইস প্রেসিডেন্ট টেরো কুইটিনেন জানান, ইন্সট্যান্ট ম্যাসেজিংয়ের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে ইউরোপে। তুলনামূলকভাবে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং ব্যবহারে ইউরোপ অঞ্চলের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য পিছিয়ে আছে।
কুইটিনেন জানান, দুই বছর আগে থেকে নেদারল্যান্ডস ও স্পেনে এসএমএস পাঠানোর হার কমতে শুরু করেছে। ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলেও এ ধারা শুরু হয়েছে।
স্পেনের টেলিকম গবেষক হোরাস দেদিও জানান, কয়েক বছরের মধ্যেই এসএমএসের দিন শেষ হয়ে যাওয়ার কথা বলছেন অনেক বিশ্লেষকই। তবে স্পেনের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, বিশ্লেষকদের ধারণার চেয়েও দ্রুত সময়ে এসএমএসের দিন শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যেসব দেশে মোবাইলে বার্তা আদান-প্রদানের জন্য খরচ বেশি, সেসব দেশে মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশনগুলো দ্রুত জনপ্রিয় হবে। যুক্তরাজ্যের মতো যেসব দেশে বার্তা আদান-প্রদান খরচ কম সেই দেশগুলোতে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না।
ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিটের (আইটিইউ) গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন ও যুক্তরাজ্যে মোবাইলে বার্তা পাঠানোর খরচ বেশি। বার্তা পাঠানোর খরচ বেশি হলেও এ বছর মোবাইলে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে ফোরজি বা চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্কের কল্যাণে। ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে স্পেনের বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিতব্য মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে এবার বেশি ফোরজি প্রযুক্তির পণ্য দেখানো হতে পারে বলে জানা গেছে।
গার্টনারের প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, দ্রুতগতির ফোরজি নেটওয়ার্কের কল্যাণে ইনস্ট্যান্ট মোবাইল সেবা আরও বাড়বে, বড় ধরনের পার্থক্য চোখে পড়বে।
সিএনবিসির বিশ্লেষক জশ লিপটন জানিয়েছেন, এখন স্মার্টফোনের উপযোগী অনেক মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন বিদ্যমান। তার মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপ ও স্ন্যাপচ্যাট যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এসব অ্যাপের উদ্ভাবনী ফিচারগুলোর কল্যাণে প্রচলিত মেসেজ বা বার্তা পাঠানো বাদ দিয়ে এই অ্যাপগুলোর দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই।
লিপটন জানান, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিংয়ের গ্রুপ মেসেজিং, ফটো মেসেজ প্রভৃতি ফিচার যোগাযোগের ক্ষেত্রটিও আরও সহজ ও মজাদার করে তুলছে। অনেকের মোবাইলে এখন তিন-চারটি মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন দেখা যায়।
এখন কীভাবে একাধিক মেসেজ প্ল্যাটফরম থেকে সুবিধা নিতে হয় মানুষ সে অভিজ্ঞতা নিতে শিখে গেছে। আগামী কয়েক বছর পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন গবেষকেরা।
ডিলোইটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোবাইল এসএমএসের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়া কিংবা ইনস্ট্যান্ট মেসেজিংয়ের জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার মধ্যে সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন এসএমএস পাঠানোর পরিমাণ জার্মানিতে বাড়ছে। এখানে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিংয়ের বৃদ্ধির হার ৪৩ শতাংশ। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে এসএমএস ও ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং দেশভেদে সহাবস্থান করবে।
ফরেস্টার রিসার্চের গবেষক অ্যান্থনি মুলেন বলেন, ডাটা বা তথ্য হচ্ছে গ্রাহকদের কাছে মূল বিষয় আর এ ক্ষেত্রে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অনেক এগিয়ে। মোবাইল অপারেটর কতগুলো এসএমএস পাঠানোর সুযোগ দিচ্ছে তার চেয়ে গ্রাহকের কাছে এখনগুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কী পরিমাণ ডাটা বিনা মূল্যে পাঠানোর সুযোগ রয়েছে, সে বিষয়টি।