সদরে প্রচারনা শেষ, ভোট গ্রহণ ২৭ ফেব্রুয়ারি

উপজেলার নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি। মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে শেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচারনা। ২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন দাখিলের পর থেকে শুরু হওয়া নির্বাচনীন প্রচারনায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর ভোট চাওয়ার সরব প্রতিযোগিতায় মুখর ছিল উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রাম ও মহল্লা। আনুষ্ঠানিক প্রচারনা শেষ হলেও পছন্দের প্রার্থীদের বিজয়ের মালা পড়াতে নির্বাচনী কর্মী আর ভোটারদের মধ্যে বিরাজ করছে নির্বাচনী উৎসব। শহর ও গ্রামের পাড়া-মহল্লার অলিতে-গলিতে ও রাস্তার পাশে বিরাজ করছে নির্বাচনী পোস্টার ও ব্যানার।

এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫, ভাইস চেয়ারম্যান ৯ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান, জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি ও ১৯ দল মনোনীত একক প্রার্থী দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন (কাপ-পিরিচ প্রতীকে), জেলা আওয়ামীলীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান ( হেলিকপ্টার প্রতীকে), জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী জুনেদ আহমদ (মোটরসাইকেল প্রতীকে), জাতীয়পার্টি মনোনীত প্রার্থী ও সদর উপজেলা জাপা’র আহ্বায়ক রশিদ আহমেদ টিটি (আনারস প্রতীকে), জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কিমিটির সদস্য এডভোকেট মনিষ কান্তি দে মিন্টু (ঘোড়া) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এর আগে মনোনয়ন দাখিল করলেও দলীয় সিদ্ধান্তে জেলা বিএনপির’র সহসভাপতি মোঃ আকবর আলী, জেলা বিএনপির’র সাংগঠনিক সম্পাদক আসম খালিদ তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন।

এছাড়া ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ৯জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, ১৯ দলীয় জোট মনোনীত একক প্রার্থী বদরুল কাদির শিহাব (তালা প্রতীকে), জেলা আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী রাশেদ বখত নজরুল (বই প্রতীকে), আওয়ামীলীগ নেতা শামীম রশিদ চৌধুরী সামু (উড়োজাহাজ প্রতীকে), যুবলীগ নেতা মাসুক আহমদ (মাইক প্রতীকে), স্বতন্ত্র প্রার্থী শামসুল ইসলাম মুর্শেদ (টিয়াপাখি প্রতীকে ), হাফেজ ফেদাউর রহমান (চশমা প্রতীকে ), স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল হোসেন (বৈদ্যতিক বাল্ব প্রতীকে ), আওয়ামীলীগ নেতা শাহ আলম সেরুল (জাহাজ), মোঃ মমিন মিয়া (টিউবয়েল প্রতীকে)

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এর মধ্যে বর্তমান মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেত্রী ফেরদৌসি সিদ্দিকা ( হাঁস প্রতীকে), ১৯ দলীয় জোট মনোনীত প্রার্থী হেলেনা বেগম (প্রজাপতি প্রতীকে) আওয়ামীলীগে মনোনীত প্রার্থী নিগার সুলতানা কেয়া ( বৈদ্যতিক পাখা প্রতীকে), সৈয়দা জাহানারা বেগম (ফুটবল প্রতীকে), সামিনা চৌধুরী (পদ্মফুল প্রতীকে), সাবিনা ইয়াসমিন (কলস প্রতীকে) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

একাধিক প্রার্থী থাকায় আওয়ামী বলয়ের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বিরাজ করছে নিরব হতাশা। এদিক দিয়ে বেশ ফুরফুরা মেজাজেই আছেন জেলা বিএনপি’র সহসভাপতি ও ১৯ দল মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন। কেন্দ্রীয় নেতার উপস্থিতিতে দলীয় কোন্দল মিটে যাওয়ায় সাধারণ কর্মীদের মাঝেও লক্ষ্য করা গেছে বেশ উৎসাহ। তবে সারা দেশের ফলাফলে আশাব্যঞ্জক ফল না পাওয়ায় আওয়ামীলীগও নেমেছে আটঘাট বেঁধে।

এক্ষেত্রে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে আওয়ামীলীগ ও ১৯ দলের প্রার্থীর মধ্যেই। এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতায় এগিয়ে আছেন ১৯ দলের প্রার্থী ও সাবেক ছাত্রনেতা বদরুল কাদির শিহাব। পৌরমেয়র আয়ুব বখত জগলুল এর ছোট ভাই আমেরিকা প্রবাসী রাশেদ বখত নজরুর পারিবারিক ও দলীয় সমর্থনের কারণে চলে আসতে পারেন মূল প্রতিদ্বন্দিতায়। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী নিগার সুলতানা কেয়া ও ১৯ দলের প্রার্থী হেলেনা বেগমের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের কথাই বলছেন সাধারন ভোটাররা।

তবে এক্ষেত্রে খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এগুচ্ছে ১৯ দলের অন্যতম শরীক জামায়াত। সারা দেশে তাদের বিপুল জনসর্মথনের পরও ছাতকে ও দোয়ারাবাজারে জামায়াত প্রার্থীদের ঠেকাতে বিএনপির ভাওতাবাজী ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জে জামায়াতের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীকে পরাজিত করতে আওয়ামীলীগের সাথে জমিয়তের হাত মেলানো যথেষ্ট দাগ কেটেছে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের মনে। তবে এর প্রভাব বর্তমান উপজেলা নির্বচানে কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও মন্তব্য করেছেন জামায়াত-শিবিরের জেলা পর্যায়ের নেতা।

উপজেলার ১লক্ষ ৬২হাজার ৪শ ৭৮ ভোটের মধ্যে নদীর উত্তর পাড়ের সুরমা, জাহাঙ্গীরনগর ও রঙ্গারচর ইউনিয়নে রয়েছে ৫০ হাজার ভোট। বিগত প্রতিটি উপজেলা নির্বাচনে যে কোনো প্রার্থীর বিজয়ে আঞ্চলিকতার টান টানলেও এবার এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা গেছে। এলাকার নারী, পুরুষ সকলেই বলছেন এবার আর আঞ্চলিকতা নয় এবার ভোট হবে প্রার্থীর যোগ্যতা ও রাজনৈতিক আদর্শ বিবেচনায়।

তবে যে যাই বলুক আর ভোটার ও দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মুখে বিজয়ের সুখকর কথা যাই শুনা যাক না কেন, চূড়ান্ত ফলাফল জানতে অপেক্ষা করতে ২৭ তারিখ ভোট গণনা পর্যন্ত।

x