চার ছক্কা হই হই বল গড়াইয়া গেল কই
শনিবার সকালে সিলেটের ব্যস্ততম সড়ক চৌহাট্টা পয়েন্টে হঠাৎ রিকশার ক্রিং ক্রিং, গাড়ির হরণ এর মধ্যে বেজে ওঠে ‘চার ছক্কা হই হই বল গড়াইয়া গেল কই’। আর তখনই হঠাৎ করেই একটা মেয়ে আইসক্রিম খেতে খেতে রাস্তার মাঝখানে এসে বিটের তালে তালে নাচা শুরু করে দিল। পাশ দিয়ে দুজন বান্ধবি হেঁটে যাচ্ছিল, তারাও এসে নাচে যোগ দিল।
রিকসায় করে অফিসে যাচ্ছিলেন স্যুট-টাই পড়া এক ভদ্রলোক। তড়িঘড়ি করে রিকসা থেকে নেমে তিনিও যুক্ত হলেন। চেম্বার থেকে একজন ডাক্তারও এলেন। এভাবে একে একে চল্লিশ জনের একটি দল নাচে- গানে মাতিয়ে তুললেন পুরো চৌহাট্টা পয়েন্ট।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, এমসি কলেজ ও মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নিয়েছে। প্রায় ৩০ জনের বেশি শিক্ষার্থীই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছে। মূল উদ্দেশ্য হল আইসিসি টি টোয়েন্টি থিম সং এর ভিডিও শ্যুটিং।
তারা জানান, দুই মিনিটে একটি দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। তাতে তারা যোগ হবেন বলে আশাবাদী।
উপমহাদেশের প্রথম গ্রিন গ্যালারির সাথে এবার যোগ হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপের থিমসং এর ফ্ল্যাশ মোবে সিলেট। সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা খলিলুর রহমান ফয়সাল। তিনি জানান টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের তিন ভেন্যু ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে। গানটির সঙ্গে এই তিন শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যুক্ত করারও পরিকল্পনা আইসিসির। এর সূত্র ধরেই সিলেট থেকে তিনি ও তার দল কাকতাড়ুয়া আইসিসির এই ‘অফিসিয়াল ইভেন্ট সং’ এর উপর মিউজিক ভিডিও বানানোর পরিকল্পনা করেছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু হয়েছে । অভিনয়, সুদর্শন-সুদর্শনা এবং নৃত্য নৈপুন্যের উপর ভিত্তি করে বাছাইয়ের কাজ সম্পন্ন করেছিলাম। প্রথমদিন আমরা বসি ক্যাম্পাসের ছোট্ট শহীদ মিনারে। একুশের চেতনা আর বুকে লাল সবুজের শক্তি। প্রতিটি চোখ যেন জয়ের জন্য জ্বল জ্বল করা রাঙ্গা পোস্টার। ক্যাম্পাসের মিনি অডিটরিয়ামে যেদিন থেকে মহড়া শুরু তখন থেকেই সাজ সাজ রব। বাংলাদেশের জনপ্রিয় ড্যান্স গ্রুপ কোম্পানী ঈগল আমাদের প্রশিক্ষন দেয়। দিনরাত খেটেও তরুনপ্রাণে বিশ্রাম নেই। প্রতিটি স্টেপ মূহুর্তেই আয়ত্ব করে নিচ্ছে। যে আগে কখনো ড্যান্স করেনি সেও হিপ হপের দোলায় মাথা নাড়াচ্ছে। আসলে গানে এক ধরনের মাদকতা আছে। যা শুনলে মনে হচ্ছে যেন দেহের প্রতিটি কোষ দোলে উঠবে । আগে থেকেই বলা ছিল ভিডিওটা হবে ফ্ল্যাশ মোব। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই স্ট্রিট ড্যান্স জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে অনেকেই এর নামও শুনেননি। আর সিলেটে তো প্রথমবারের মতো হচ্ছে ফ্ল্যাশ মোব। রিহার্সেল এর এক ফাঁকে সবাই চলে গেল সিকৃবি ক্যাম্পাসের প্রজন্ম চত্ত্বরে। খোলা আকাশের নিচে বিকেলে একদল ছেলে মেয়ের নাচ দেখে সবাই যার পর নাই অবাক হয়েছে। হচ্ছেটা কি? উত্তর না দিয়েই স্টেপ দেয়-চার ছক্কা হই হই, বল গড়াইয়া গেল কই? বাংলাদেশের বড় একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানী গ্রে এর কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হিমসিম খাচ্ছিলাম। তবু বড়দের সাথে কাজ করার মজাই আলাদা, শেখার আছে অনেক কিছু।
নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়ে ক্যাম্পাসে ফিরছিলাম। সিলেটের রাস্তায় ভীড় ঠেলে নির্বিকার ভাবে হেটে যাচ্ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সনজা স্টিফেন। তড়িৎ গতিতে মাথায় এলো একজন বিদেশী যদি আমাদের সাথে ড্যান্স করেন তাহলে আমাদের ফ্ল্যাশ মোবটি সার্বজনীন রূপ পাবে । কাকতাড়–য়ার সহকর্মী শুভকে বলতেই সে বিদেশীনির পেছনে দৌড়। বিদেশীনিতে থামিয়েই ভাঙ্গা ইংরেজীতে তাকে আমার পরিকল্পনার কথা বললাম । সেও খুব আগ্রহ বোধ করলো। রাতে তাদের ইমেইলে যোগাযোগ করলাম পরদিনই সনজা তার আরেক বান্ধবী আমেরিকান মেয়ে এলিজাবেদ থমাসকে নিয়ে হাজির । সনজা ও এলিজাবেদকে পেয়ে আমাদের পুরো ইউনিট যেন নতুন করে প্রান পেল । বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত আমরা সবাই এক সাথে স্টেপ দিই- চার ছক্কা হই হই, বল গড়াইয়া গেল কই ।