শিক্ষক জাকির হোসেনের প্রয়াণে সরকারি কলেজে শোকসভা

সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. জাকির হোসেনের অকাল প্রয়াণে কলেজ মিলনায়তনে শোকসভা করেছে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মচারীবৃন্দ।

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কলেজ মিলনায়তনে এই শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। অধ্যক্ষ প্রফেসর মেজর ছয়ফুল কবীর চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং বাংলা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন, উপাধ্যক্ষ সৈয়দ মহিবুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক কল্পনা তালুকদার, সহকারি অধ্যাপক জীবন কৃষ্ণ আচার্য্য, মো. নূরে আলম, মো. আব্দুর রকিব তারেক, মোস্তানসার বিল্লাহ, প্রভাষক শামীম মিয়া, নাদিম হোসেন প্রমুখ।

বক্তারা আবেগতাড়িত কণ্ঠে প্রয়াত শিক্ষক জাকির হোসেনের স্মৃতিচারণ করেন। তাঁরা বলেন, জাকির হোসেন একজন অমায়িক মানুষ ছিলেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি অন্যদের কাছে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক হয়েও ইংরেজি, মনোবিজ্ঞান ও বাংলায় ছিল তাঁর অগাধ জ্ঞান।

বক্তারা আরো বলেন, জাকির হোসেন শুধু আদর্শ শিক্ষক নন, ব্যক্তিগত জীবনে একজন আদর্শ পিতা ও আদর্শ মানুষ ছিলেন। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জনক, তাঁর ছেলে জিসানও অত্যন্ত মেধাবী কিশোর, যে সারাদেশে স্পেলিং-বি প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, এমন এক ছেলেও পিতৃহারা হলো।

বক্তারা বলেন, শিক্ষক হিসেবে অল্পদিনেই তিনি শিক্ষার্থীদের ভালবাসার স্থানটি জয় করে নিয়েছেন, জাকির হোসেনের গুণাবলী আমাদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।

শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে শোক সভায় বক্তব্য রাখেন, মাসুম আহমেদ, মেহনাজ তাবাসসুম ও বুশরা জান্নাত।

মাসুম আহমেদ মঞ্চে ওঠে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিক্ষার্থী মেহনাজ বলেন, আমার বাবা নেই, বাবাকে হারানো প্রত্যেক সন্তানের জন্য কতটুকু কষ্টের সেটা আমি বুঝি। স্যার আমাদের প্রত্যেককে সন্তানের মতই আদর করতেন। এমন একজন মানুষের অকালে চলে যাওয়াটা আমরা মেনে নিতে পারছি না। বুশরা জান্নাত বলেন, আমরা একজন আদর্শকে হারালাম।

আলোচনার আগে দাঁড়িয়ে ১মিনিট নিরবতা পালন করেন মিলনায়তনে উপস্থিত হওয়া সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আলোচনা শেষে দুপুর ১টায় প্রয়াত জাকির হোসেনের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন।

এর আগে, সোমবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টায় ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে মো. জাকির হোসেন স্ট্রোক করে মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আলসার ও হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ৭ মার্চ ঢাকায় অবস্থান করার সময় তিনি হঠাত বুকে ব্যথা অনুভব করেন। অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তাঁকে হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়। প্রথমে তাঁকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) রাখা হয়, পরে অবস্থার অবনতি ঘটলে লাইফ-সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়।

মো. জাকির হোসেনের জন্ম ১৯৬৬ সালে, ফরিদপুর জেলায়। ১৪শ বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষা ক্যাডারে যোগদান করে শিক্ষকতা পেশায় আসেন তিনি। কয়েকটি সরকারি কলেজে প্রভাষক, সহকারি অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। প্রায় একবছর আগে তিনি সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে যোগদান করেন। সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে শিক্ষকতার অল্পদিনেই তিনি গুণী ও বন্ধুত্বপূর্ণ শিক্ষক হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পিএইচডি ডিগ্রির লাভের জন্য ক্ষুদ্রঋণের উপর গবেষণা করছিলেন তিনি।

x