মালয়েশীয় কর্মকর্তাদের দাবি ছিনতাই হয়েছে বিমানটি
আট দিন ধরে নিখোঁজ মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের বিমানটি ছিনতাই হয়েছে। ঘটনা তদন্তে নিয়োজিত মালয়েশিয়ার সরকারি কর্মকর্তারা গতকাল শনিবার জোর দিয়ে এ কথা বলেছেন। তাঁদের দাবি, বিষয়টি এখন ‘নিশ্চিত’।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ছিনতাই হওয়ার কথা নিশ্চিত না করলেও বিমানটির যোগাযোগ-ব্যবস্থা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো আরোহীর বন্ধ করে দেওয়ার সম্ভাবনার কথা স্বীকার করেছেন।
বিমানটির পরিণতি নিয়ে সপ্তাহজুড়ে যেসব কথা বলাবলি হচ্ছিল, সন্দেহভাজন সন্ত্রাসবাদীদের হাতে ছিনতাই হওয়া তার একটি। তবে এবারই প্রথম কোনো সরকারি কর্মকর্তার পক্ষ থেকে এত সুনির্দিষ্ট-ভাবে এ সম্ভাবনার কথা বলা হলো।
নিখোঁজ মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজটির গতিপথ, এর সম্ভাব্য দুর্ঘটনায় পড়া এবং কথিত ধ্বংসাবশেষের তথ্য ও ছবি নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে নানা ধরনের তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছিল। প্রতিটি তথ্যই পরে কোনো না কোনো পক্ষ নাকচ করে দেয়। এতে রহস্য ঘনীভূত হওয়ার পাশাপাশি দেখা দেয় চরম বিভ্রান্তি। এ কারণে মালয়েশীয় কর্মকর্তাদের এ ‘নিশ্চিত’ তথ্যও কতক্ষণ টেকে তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
মালয়েশীয় তদন্তকারীদের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইল পত্রিকা গতকাল বলেছে, নিখোঁজ বিমানটিকে ছিনতাই করে যাত্রাপথ থেকে ঘুরিয়ে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
পত্রিকাটির খবর অনুযায়ী, মালয়েশীয় একজন কর্মকর্তা বলেন, যাত্রীদের মধ্যে বিমান চালনার ‘উল্লেখযোগ্য দক্ষতাসম্পন্ন’ কেউ বিমানটির যোগাযোগের যন্ত্রগুলো বন্ধ করে দিয়ে থাকতে পারেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, বিমানটি ছিনতাইয়ের এ তথ্য এখন ‘চূড়ান্ত’। পুলিশ বিমানটির চালকদের মধ্যে একজনের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ফ্লাইট এমএইচ৩৭০ ছিনতাই হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে বিমানটির যোগাযোগব্যবস্থা ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করে এর গতিপথ পাল্টে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি।
গতকাল কুয়ালালামপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে রাজাক বলেন, ‘বিমানটি ছিনতাই হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এমএইচ৩৭০ কী কারণে নির্দিষ্ট পথে না গিয়ে অন্যদিকে গেল, সে বিষয়ে সব সম্ভাবনা আমরা এখনো তদন্ত করছি।’
ছিনতাইয়ের তথ্যটি যদি সঠিক হয়েও থাকে, বিমানটিকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। এ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী রাজাক বলেন, স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া সাম্প্রতিকতম তথ্য অনুযায়ী সম্ভাব্য দুটি পথের কোনো একটিতে নিয়ে যাওয়া হতে পারে বিমানটিকে। সম্ভাব্য একটি পথ হলো মালয়েশিয়ার উত্তরের করিডর; যা কাজাখস্তান ও তুর্কমেনিস্তান সীমান্ত থেকে উত্তর থাইল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত। অন্যটি দক্ষিণের করিডর; যা ইন্দোনেশিয়া থেকে দক্ষিণ ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।
প্রধানমন্ত্রী রাজাক জানান, গতিপথ পাল্টে বিমানটিকে অনেক পশ্চিমে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়েছে—তদন্তকারীরা এ আভাস দেওয়ায় দক্ষিণ চীন সাগরে অনুসন্ধান তৎপরতা গুটিয়ে ফেলছে তাঁর দেশ।
ডেইলি মেইল জানিয়েছে, ওই বিমানে যে পরিমাণ জ্বালানি ছিল, তাতে সেটির পক্ষে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা বা অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব। ছিনতাইয়ের সম্ভাব্যতা মাথায় রেখে মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশের কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে দুই বিমানচালক ও ১০ সদস্যের ক্রুর পাশাপাশি ২২৭ জন যাত্রীর ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করবে।
এরই মধ্যে মালয়েশিয়া পুলিশ জানিয়েছে, তারা পাইলট জাহরি আহমেদ শাহ (৫৩) ও ফারিক আবদুল হামিদের (২৭) অতীত মনস্তাত্ত্বিক বিষয়াদিসহ পরিবারের সদস্য ও অন্যদের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগের তথ্যের ব্যাপারে খোঁজখবর শুরু করেছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা গত শুক্রবার জানান, বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার পেছনে ‘কারও হস্তক্ষেপের’ বিষয়ে তাঁরা তদন্ত করছেন। একজন কর্মকর্তা বলেই ফেলেন, এটি ছিনতাইয়ের শিকার হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানটি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্য পরিষ্কার নয়। কেননা, এটি ছিনতাই হয়ে থাকলে ছিনতাইকারী বা এর সঙ্গে জড়িত গোষ্ঠীর এ পর্যন্ত কোনো না কোনো দাবি তোলা বা দায়দায়িত্ব স্বীকার করার কথা। বিবিসি, এএফপি ও ডেইলি মেইল।