টি-টোয়েন্টির বিশ্ব উৎসব শুরু, আনন্দে উদ্বলিত দেশবাসী
ক্ষণগণনা শুরু হয়েছিল অনেক আগে থেকেই। নগরের রাস্তায় আসতে-যেতে হয়তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ‘কাউন্ট-ডাউন টাইমার’ও চোখে পড়েছে অনেকের। দিন-ঘণ্টা-মিনিট কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অপেক্ষার রোমাঞ্চ।
আজ শেষ হচ্ছে সেই অপেক্ষা। মিরপুরে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের। যে মহাযজ্ঞের জন্য এত দিনের প্রস্তুতি, সেটির মঞ্চায়ন শুরু।
মহাযজ্ঞই তো! একক দেশ হিসেবে এর আগে বাংলাদেশ আয়োজন করেছে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি (তখনকার নকআউট বিশ্বকাপ), ভারত-শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মিলে যৌথ স্বাগতিক ছিল ২০১১ বিশ্বকাপেরও। কিন্তু ছেলে আর মেয়েদের মিলিয়ে ২৬টি দল আর ৬২টি ম্যাচের এমন মহাযজ্ঞের একক আয়োজন এ দেশের খেলাধুলার ইতিহাসেই যে প্রথম! দেখিয়ে দিতে হবে না যে আমরাও পারি।
দেখানোর চ্যালেঞ্জটা শুধু আয়োজনেই নয়, মাঠের খেলাতেও। এমনিতেই আইসিসির অদ্ভুত সিদ্ধান্তের কারণে টেস্ট খেলুড়ে দেশ হয়েও বাংলাদেশকে পেরোতে হচ্ছে ‘প্রথম পর্ব’ নামের একটা বাড়তি বাধা। তার ওপর কয়েক মাস ধরে মাঠে মুশফিক-সাকিবদের পারফরম্যান্স। জমকালো আয়োজন দিয়ে আয়োজক হিসেবে হয়তো উতরে যাবে বাংলাদেশ, কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সটা সে রকম না হলে যে প্রাপ্তির খাতাটা ফাঁকাই রয়ে যাবে শেষতক। পরপর কয়েকটা সিরিজ-টুর্নামেন্টে ব্যর্থতা ভুলে গিয়ে এ দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা তাই বুক বেঁধেছেন নতুন আশায়। সে আশা এখানে আরেকটু বেশি কারণ খেলাটা টি-টোয়েন্টি। গায়ে ফেবারিটের তকমা না থাকলেও এখানে যে কেউ যে কারও ঘাতক হয়ে যেতে পারে। মুশফিকেরা কেন পারবেন না!
প্রাপ্তির খাতা ভরে দেওয়ার দায়িত্ব এবার মুশফিকদের পাশাপাশি সালমা-লতাদের। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেয়েরা এবারই প্রথম। আবার একটা দিক দিয়ে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরাই বরং সুবিধাজনক স্থানে। প্রথম পর্ব নামের বাড়তি বাধা নেই তাঁদের, সালমারা খেলবেন সরাসরি গ্রুপ পর্বে। পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজ হারিয়ে প্রত্যাশাটা বাড়িয়েও দিয়েছেন বাংলাদেশের মেয়েরা।
দেখিয়ে দেওয়ার এই চ্যালেঞ্জটা বাদ দিলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে থাকছে দেখার আনন্দও। গেইল-ম্যাককালামদের ঝড় থাকছে, মালিঙ্গা-স্টেইনদের আগুনের গোলা থাকছে। থাকছে হেলিকপ্টার শট আর দিলস্কুপ। একঘেয়েমি চলে এলে চার-ছক্কার মাঝে থাকছে ‘চিয়ারলিডার’দের নাচও। কিন্তু ওই যে সব আনন্দই মাটি হয়ে যাবে যদি প্রত্যাশাটা পূরণ করতে না পারেন মুশফিক-সাকিবেরা।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০০৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময় জোহানেসবার্গ বিমানবন্দরের বাইরে নাকি স্বাগতিক ছাড়া অংশগ্রহণকারী বাকি দেশগুলোর অধিনায়কের ছবিসহ একটা ব্যানার করা হয়েছিল, যার নিচে লেখা ছিল, ‘পোলক, আমরা এদের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসেছি, এখন একে একে এদের ফেরত পাঠানোর দায়িত্ব তোমার।’
বাংলাদেশ শাহজালাল বিমানবন্দরে এবার এমন কোনো ব্যানার টানায়নি। হয়তো মুশফিকদের কাছে চাওয়াটা এখনো এত বড় হয়নি বলে। কিন্তু না চেয়েও তো মুশফিকেরা আগে কত গৌরব এনে দিয়েছেন। এবারও নিশ্চয়ই বিমুখ করবেন না!