শাহ আমানত বিমানবন্দরে ১০৭ কেজি স্বর্ণসহ আটক ১০
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট থেকে ১০৭ কেজি ওজনের ৯২৩ টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করেছে কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এসব স্বর্ণের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৪৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ধরা পড়া স্বর্ণের এটিই সবচেয়ে বড় চালান। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনকে এবং সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনসহ মোট ১০ জনকে আটক করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা ১১টা পাঁচ মিনিটের দিকে দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের বিজি-০২৬ ফ্লাইটে তল্লাশি চালিয়ে স্বর্ণগুলো উদ্ধার করা হয়।
বিমানবন্দরে নিয়োজিত কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার মশিউর রহমান মন্ডল বলেন, দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের বিজি-০২৬ ফ্লাইটটি মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৫ মিনিটে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
ওই ফ্লাইটে তল্লাশি চালিয়ে ৯০৫টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। পরে আটক এক যাত্রীর দেয়া তথ্যে কাস্টম কর্মকর্তাদের টেবিলের ড্রয়ার থেকে আরো ১৮টি স্বর্ণবার উদ্ধার করা হয়। ফলে মঙ্গলবার আটক চালানে স্বর্ণের ওজন ১০৭ কেজি। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৪৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
মণ্ডল জানান, বিমানে নিয়মিত তল্লাশি চালানো হয়। এরই অংশ হিসেবে দুবাই থেকে আসা বিমানেও তল্লাশি পরিচালনা করা হয়। এসময় সাতজন যাত্রীর আসনের নিচ থেকে বিভিন্নভাবে মোড়ানো অবস্থায় স্বর্ণের বারগুলোর উদ্ধার করা হয়।
দুবাই থেকে আসা আটক সাত যাত্রী হলো-হাটহাজারী উপজেলার কাটিরহাট এলাকার বাসিন্দা মো.ইয়াকুব, রাউজান পূর্বগুজরা এলাকার মহিন উদ্দিন, রাউজান উত্তর গুজরা এলাকার নাহিদ তালুকদার, ফটিকছড়ি শাহনগর এলাকার ইমতিয়াজ খান, ফটিকছড়ি রায়পুর এলাকার পেয়ারুল ইসলাম, মুন্সিগঞ্জ জেলার হালদা এলাকার মনসুর ইসলাম এবং ময়মনসিং জেলার নান্দাইল থানার কুমারু এলাকার শফিক ইসলাম।
এছাড়া ফটিকছড়ি এলাকার মো.রহিম শিকদার, মো.হাসান মাহমুদ ও মো.ফয়সালকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে। এরমধ্যে হাসান মাহমুদ চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে স্বর্ণের সবচেয়ে বড় চালান আটকের পর বিমানবন্দরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মাসুদ সাবিক সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে আসা সবচেয়ে বড় স্বর্ণের চালানটি ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চলে যেতো। কাস্টমস কর্মকর্তাদের তৎপরতায় সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
কাস্টমস কমিশনার জানান, চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবাই থেকে আসা সাতজন যাত্রীকে আটক করা হয়েছে। পরে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের তিন যাত্রীকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়।
তিনি বলেন,‘আভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের তিন যাত্রী ঢাকা যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে আসেন। বোর্ডিং কার্ড গ্রহণের পর তা বাতিল করায় সিলিভ এভিয়েশনের কমকর্তারা তাদের সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে সোপর্দ করে।
অবশ্য মো.হাসান মাহমুদ দাবি করেছেন বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট ডিলেই করার কারণে তারা যাত্রা বোর্ডিং কার্ড বাতিল করেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে দুইঘণ্টা দেরিতেও ফ্লাইট ছাড়তে পারেনি। ফলে আমি ঢাকায় যে কাজে যাবো তা হবে না। তাই ঢাকা না গিয়ে ফিরে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আমাদের আটক করে।
পরে আটককৃতদের ১০জনকে নগরীর পতেঙ্গা থানায় হস্তান্তর করা হয়। সম্প্রতি শাহ আমানতে স্বর্ণ চোরাচালান বেড়ে যাওয়ায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে জানিয়ে কাস্টমস কমিশনার বলেন, চোরাচালান ধরতে সতর্ক রয়েছি আমরা। বিমানে এবং যাত্রীদের শরীরে নিয়মিত তল্লাশি চালানো হয়। এছাড়া সন্দেহভাজন যাত্রীদের শরীর তল্লাশির পাশাপাশি স্ক্যানিং করা হয়।
বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে স্বর্ণ চোরাচালানির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এসব ফ্লাইটে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। স্বর্ণের চালান আটক করা হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে কি ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে মাসুদ সাদিক বলেন, কাস্টমস আইন অনুযায়ী আটক যাত্রীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এসব স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে কারা জড়িত তা পুলিশ তদন্ত করে বের করতে পারে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশনের উইং কমান্ডার নুর-ই-আলম বলেন, বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে করে ঢাকা শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম শাহ আমানতে আসেন তিনি যাত্রী। কিন্তু তারা তাদের বোডিং কার্ড বাতিল করায় সন্দেহ হয় আমাদের। তাই তাদের আটক করা হয়।