রক্ত দিয়ে হলেও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো
রক্ত দিয়ে হলেও বাংলাদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলার মানুষকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে আসীন করতে তিনি যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রয়োজনে বাবার মতো বুকের রক্ত দিয়ে যাবো। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো। এই ওয়াদা দিয়ে গেলাম।”
শনিবার দুপুরে বিআইডব্লিউটিসি’র নবনির্মিত যাত্রীবাহী জাহাজ ‘এমভি বাঙালি’র উদ্বোধন শেষে জাহাজে করে চাঁদপুর জেলার মতলব থানার মোহনপুর নদী বন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মোহনপুরের নদীর তীরে স্বতঃস্ফূর্ত জনতার উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করবো।
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আর গরিব মানুষ থাকবে না। আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা গৃহহীনদের ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। কেউ গৃহহীন থাকবে না।
জাতির পিতা দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ করতে।
সবার দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-এ জাতির জনককে হত্যার পর যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছে, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে রিরোধিতা করেছে বাংলার মাটিতে তাদের বিচার হবেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই। কেউ তাদের রক্ষা করতে পারবে না।
সবাইকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র কেউ যাতে নসাৎ করতে না পারে সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, সর্তক থাকতে হবে।
সরকার স্টিমার সার্ভিসকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগে স্টিমার সার্ভিস ব্যাপকভাবে চালু ছিলো। ধীরে ধীরে এটি নষ্ট হয়ে যায়। আমরা এর পুনরুজ্জীবনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছি।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, শ্রমমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নৌমন্ত্রী শাহাজাহান খান, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
মোহনপুর নদী বন্দর ও আশপাশের এলাকা ছিলো লোকে লোকারণ্য। হাজারো মানুষ ভিড় জমায় এখানে। তারা স্লোগান ও হাততালি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা
জানান। আনন্দিত অনেককে নদীর পানিতে ঝাঁপিয়ে উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।
বেলা পৌনে ২টার দিকে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার পথে রওনা দেন।
এর আগে ঢাকা সদরঘাট থেকে মোহনপুর পর্যন্ত নদীর দুই তীরে বিভিন্ন স্থানে শত শত মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানায়। অনেক স্থানে প্রধানমন্ত্রী জাহাজের গতি কমিয়ে তাদের অভিনন্দন গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী সকাল ১০টায় রাজধানীর সদরঘাটে এমভি বাঙালি জাহাজটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পরে এর উদ্বোধনী যাত্রায় অংশ নেন।
উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী বুড়িগঙ্গা দূষণ, দূষণ মোকাবেলায় গৃহীত পদক্ষেপ, নদী দখলমুক্তকরণ কার্যক্রমের অগ্রগতি, ড্রেজিং কাজের অগ্রগতিও
দেখেন।
‘এমভি বাঙালি’র উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চলাচলের জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডাব্লিউটিসি) যাত্রীবাহী জাহাজবহরে যোগ হলো দেশে নির্মিত প্রথম যাত্রীবাহী জাহাজ ।
এটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ২৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সময় লেগেছে ১৬ মাস।
জাহাজের যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৭৫০ জন। এর মধ্যে ভিআইপি/ফ্যামিলি স্যুট কেবিন ৪টি, প্রথম শ্রেণির ডাবল কেবিন ৩৪টি, সিঙ্গেল কেবিন ৪টি, দ্বিতীয় শ্রেণির ডাবল কেবিন ১৮টি, ২য় শ্রেণির চেয়ারে ৮৪ জন, ৩য় শ্রেণিতে (ডেক) ৫৫০ জন। এ জাহাজে ৩৪ জন ক্রু থাকবে।
ঘণ্টায় ১১.৫০ নটিক্যাল মাইল বা ২১.২৯৮ কিলোমিটার গতিবেগে চলা এ জাহাজে ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে সময় লাগবে মাত্র সাড়ে ৭ ঘণ্টা।
২৪৭.৭০ ফুট দৈর্ঘ্য, ৪১ ফুট প্রস্থ ও ৯.৮৪ ফুট উচ্চতার এ জাহাজটির খালি অবস্থায় ওজন ১ হাজার টন। বোঝাই অবস্থায় এর ওজন হবে ১২০০ টন। প্যাসেঞ্জার, ব্যাগেজ, মালামাল, তেল, পানি, স্টোরসহ জাহাজটির ডেড ওয়েট ২০০ টন। এর মধ্যে মালামাল ১০০ টন।
জাহাজটিতে ১১৮৪ বিএইচপি ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি জাপানি ‘ইয়ানমার’ ইঞ্জিন রয়েছে।