সিলেটের চা-শ্রমিকরা আন্দোলনে

বাগানের লাইন (বস্তি) ছেড়ে নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ উত্তরসূরিদের সুন্দর আগামী নির্মাণের জন্য এবার আন্দোলনে নেমেছেন সিলেটের চা-বাগানের শ্রমিকরা। আর এ আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন সিলেটের ২২টি বাগানের চা-শ্রমিকরা।

১০ দফা দাবি আদায়ে রবিবার চা-শ্রমিক সংঘ সিলেট ভ্যালির উদ্যোগে নগরীতে সমাবেশ ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে।

তাদের দাবিগুলো হলো- দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা, সরকার ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী উৎসব বোনাস, বেতনসহ সাপ্তাহিক ছুটি, অতিরিক্ত কাজের মজুরি ও পূর্ণাঙ্গ রেশন, পাতির ওজনে কারচুপি বন্ধ, সকল বাগানে এমবিবিএস পুরুষ ও মহিলা ডাক্তার প্রদান, চা শিল্পে শ্রম আইন কার্যকর, চা-শ্রমিক সন্তানদের বিনা বেতনে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার ব্যবস্থা, প্রত্যেক বাগানে কলেজিয়েট স্কুল স্থাপন ও চা-শ্রমিক সন্তানদের শিক্ষালাভের পূর্ণ নিশ্চয়তা।

মালনীছড়া চা-বাগানে সকাল ১০টায় পূজামণ্ডপ প্রাঙ্গণে সমবেত হয়ে মিছিলটি সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করে।

স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন, চা-শ্রমিক নেত্রী রাধা মনি মুণ্ডা, বিমল গঞ্জু, জয়মাত্ম কুর্মি, সুনিল মুধী প্রমুখ।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা উপেক্ষা করে মালিকের মুনাফার জন্য খেটে মরছেন চা-শ্রমিকরা। কিন্তু তাদের জীবন-জীবিকার প্রশ্নে মালিকপক্ষের কোনো নজর নেই। দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান বাজার দরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কমপক্ষে দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা নির্ধারণ করার দাবি থাকলেও মজুরি দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৬৯ টাকা। মালিকপক্ষ রেশন প্রদানের কথা বললেও মাত্র তিন কেজি চাল ছাড়া আর কিছুই শ্রমিকদের দেওয়া হয় না। তাই শ্রমিকরা পূর্ণাঙ্গ রেশন অর্থাৎ চাল, ডাল, তেল, লবণ, মসলা প্রদানের দাবি জানান।

আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০১৩-এর বিধান মতে স্ববেতন সাপ্তাহিক ছুটি থেকে চা-শ্রমিকদের বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। এক মাসের বেতনের সমপরিমাণ দুটি উৎসব বোনাস ও একটি উৎসাহ বোনাসের নিয়মও কার্যকর হচ্ছে না। তিন মাস কাজের পর চাকরি স্থায়ী করার অধিকার আজও বাস্তবায়ন হয়নি। চা শিল্পসহ ছোট বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান থাকলেও সিলেটে একটি স্থায়ী শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠা হয়নি।

স্মারকলিপি প্রদান শেষে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে চা-শ্রমিক জনগোষ্ঠীর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে অতিথি ছিলেন- জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট এনডিএফের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. এম এ করিম, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম।

x