বিএনপি রাজাকারদের দল
ঢাকা: বিএনপি রাজাকারদের দল- এমন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকরের ব্যাপারে সরকারের দৃঢ়তার কথা জানান তিনি।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সুশাসন’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে জয় এ মন্তব্য করেন।
সুচিন্তা ফাউন্ডেশন এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘যারা রাজাকারদের সমর্থন করে তারা কি স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করতে পারে? যে ব্যক্তি যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফেরত এনেছে তিনি কি মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে? কোনো মতেই না। যারা রাজাকারদের সঙ্গে রাজনীতি করে তারা কি রাজাকার নয়? অবশ্যই। রাজাকারদের স্বাধীন বাংলাদেশে কে ফিরিয়ে এনেছে? জিয়াউর রহমান এনেছে। এটা তারা কোনো মতেই অস্বীকার করতে পারে না।’
‘সত্যি কথা হচ্ছে, বিএনপি রাজাকারদের দল। তারা যদি প্রমাণ করতে চায় তারা রাজাকারের দল না। তাহলে তারা রাজাকারের দল থেকে জোট ছেড়ে আসুক। তাদের এ জোট না ভাঙা পর্যন্ত কোনদিন বিশ্বাস করা যাবে না, বলা যাবে না তারা রাজাকার না।’
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর করার দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘এত বছর পরে হলেও বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে তাদের বিচার সম্পন্ন হবে, বিচারের রায় সম্পন্ন হবে।’
আলোচনায় সজীব ওয়াজেদ জয় যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রসঙ্গ এনে বলেন, ‘যখন পাঁচ বছর আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ প্রথম শুরু হয়, পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তখন অনেকে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। অনেকে বলেছেন এখানে ইউএন (জাতিসংঘ) আনা উচিত। যাতে আর্ন্তজাতিক আইন নিয়ে কোনো প্রশ্ন না হয়। তখন কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে একটা পরামর্শ দিয়েছি। তখন আমি আমার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে বলি, ‘আমরা যাদের বিচার করছি তারা যে অপরাধ করেছে তা এই দেশের মাটিতে হয়েছে, তারা এদেশের, তারা এদেশেরই নাগরিক। আমরা অন্য দেশের নাগরিকদের বিচার করছি না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যেসব অপরাধের বিচার করছি, এগুলো যুদ্ধাপরাধ হলেও আমাদের দেশের আইনেও তো এগুলো অপরাধ। তাহলে কেন আমাদের কোন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রয়োজন এই বিচার করতে। এদের তো যুদ্ধাপরাধেরও বিচার করা লাগে না, এরা সাধারণ হত্যার বিচারে বিচার করলেই তো তাদের ফাঁসি হয়।’
যুদ্ধাপরাধের মান নিয়ে প্রশ্নকারীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে জয় বলেন, ‘যারা আজ বলছে এ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আর্ন্তজাতিক মানের না। তাদের আগে প্রমাণ করতে হবে বাংলাদেশের ক্রিমিনাল কোর্ট আর্ন্তজাতিক মানের না।’
‘আমাদের দেশের ইতিহাসে অনেক কাল রাত গেছে। অনেক কিছু মোকাবেলা করে আমরা এ পর্যন্ত এসেছি। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আমরা স্বাধীনতা হয়েছি। ৭১ একটি দেশ পাকিস্তানকে অস্ত্র দিয়ে, ট্যাঙ্ক দিয়ে, বোমা দিয়ে সাহায্য করেছে আমাদের দাবিয়ে রাখার জন্য। অস্ত্রের মুখে বোমা দিয়ে আমাদের কেউ ঠেকাতে পারেনি। এখন আমাদের কোনো দেশকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়েছি। অন্যান্য দেশ কী বলে না বলে না বলে তাতে আমাদের কিচ্ছু যায় আসে না’, যোগ করেন সজীব ওয়াজেদ জয়।
দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নেই মন্তব্য করে জয় বলেন, অনেকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কথা বলেন। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আমি তো দেখি না। অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেন এই যে মালেশিয়া সিঙ্গাপুর এগিয়ে গেছে আমরা কেন পারি না? সেসব দেশে যে দল স্বাধীনতা দিয়েছে সেদেশের মানুষ সে দলকে ২০ বছর, ৩০ বছর ক্ষমতায় রেখেছে। বাংলাদেশে সেটা হয়নি।’
‘তবে এত বছর পরে হলেও আমার মনে হয়, বাংলাদেশের মানুষ আমাদেরকে সে সুযোগ দিয়েছে। আমার বিশ্বাস যে পথে এগুচ্ছে, গত ৫ বছরে আমরা যে উন্নয়ন করেছি, এই ৫ বছর যে উন্নয়ন করবো তাতে বাংলাদেশকে আর পিছনে যেতে হবে না।’
বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অপপ্রচার, মিথ্যাচার চলছে অভিযোগ করে জয় বলেন, আজকে দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানা অপপ্রচার, মিথ্যাচার চলছে। ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই ইতিহাস বিকৃত হয়েছে। স্কুলের বইকে পর্যন্ত বিকৃত করা হয়েছে। এটা করা হচ্ছে, প্রকৃত ও সত্য ইতিহাসকে চাপা দেওয়ার জন্য। এটা অনেক বড় পরিকল্পনার অংশ। এটা তারা করেছে, যারা মিথ্যা দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছে। এটা কারা করেছে? কেন করেছে? সেটা আমাদের খুঁজে দেখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ৭৫ এর পর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করা যেত না। এখন দীর্ঘদিন পর আওয়ামী ক্ষমতায় এসেছে। এখন আমরা আলোচনা করতে পারি।
সজীব ওয়াজেদ জয় কারো নাম উল্লেখ না করেই বলেন, একজন নানা কথা বলছে। মানুষ বলছে, এই লোক কি পাগল হয়ে গিয়েছে? কেন এমন কথা বলছে? আসলে তিনি পাগল নয়।
‘হিটলারের প্রচারমন্ত্রী ছিল গোয়েবলস। তিনি হিটলারের সব কাজের প্রচার করতেন। গোয়েবলস বিশ্বাস করতেন, একটা মিথ্যা যদি একনাগাড়ে বলা হয় তবে তা একদিন সত্য হয়ে যাবে। এখানেও এখন তাই হচ্ছে। এটাই তাদের পথ।’
‘মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করতে হবে, মোকাবেলা করতে হবে, আমাদের লাজুক হলে চলবে না’, যোগ করেন জয়।
সরকার সমালোচকদের উদ্দেশ্যে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, অনেকে আছেন যারা শুধু বলেন ও লিখেন সরকার এই ভুল করেছে, ওই ভুল করেছে। সরকার এত উন্নয়ন করছে তাদের সরকারের সফলতা তুলে ধরতে লজ্জা লাগে। তাদের প্রশ্ন করলে তারা বলে আমরা সরকারের আরো ভালো চাই। তাদের বলি ৫/৬ বছর আগে বাংলাদেশ কোথায় ছিলো। দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, বিদ্যুতের অভাব সেখান থেকে আমরা ৫ বছরে দেশকে কোথায় নিয়ে এসেছি। দারিদ্র্য অর্ধেকে নামিয়ে এনেছি।’
‘তারপরও যদি বলেন আরও ভালো করতে হবে। তাহলে কী আর জবাব দিবো। আমরা তো মানুষ, আমরা তো আর জাদুকর নই।’
সুচিন্তা বাংলাদেশ এর আহ্বায়ক মোহাম্মদ এ. আরাফাত এর সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন, অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জমান, চিত্রশিল্পী হাসেম খান, যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ প্রমুখ।
সেমিনারে বিভিন্ন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।