টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে ফের বুদবুদ, আশপাশে আতঙ্ক
সুনামগঞ্জ: দেশের প্রাচীনতম গ্যাসক্ষেত্র সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের টেংরাটিলার পরিত্যক্ত গ্যাসক্ষেত্র এলাকায় ফের বুদবুদ বেড়েছে।
এতে টেংরাটিলা এলাকাবাসীর মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। লাল পতাকায় ছেয়ে গেছে টেংরাটিলার রাস্তাঘাট।
এদিকে, আজ মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) গ্যাসক্ষেত্র এলাকা পরিদর্শনে আসছেন পেট্রোবাংলা ও নাইকোর প্রতিনিধিদল।
দোযারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বিষয়টি এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, টেংরাটিলায় আবারো বুদবুদ বেড়েছে এমন খবর শুনে রোববার তিনি টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্র ও গ্রাম পরিদর্শন করেছেন।
এ সময় ওই গ্রামের মৃত হবিবুর রহমানের বসতঘরের মধ্যে ও আশপাশের বিভিন্ন ফাটল দিয়ে বুদবুদ আকারে কাঁদামিশ্রিত পানি বের হওয়ার কারণে উপজেলা প্রশাসন তাদের অন্যত্র সরে যেতে নিদের্শ দিয়েছেন।
টেংরাটিলা রক্ষা আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক আজিম উদ্দিন জানান, হবিবুর রহমানের বসতঘরের মতো পার্শ্ববর্তী হাবিবুর রহমান ও হোসেন মিয়ার বসতঘরেও একই অবস্থা। এছাড়া গ্রামের রশিদ মিয়ার টিউবওয়েল থেকে অনবরত পানির সঙ্গে গ্যাস বের হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, গ্যাসক্ষেত্রের পাশের গ্রামের বিভিন্ন পুকুর, জমি, রাস্তা ও বাড়ি-ঘরের ফাটল দিয়ে গ্যাস বুদবুধ আকারে বের হচ্ছে। এ কারণে গ্রামের বৃদ্ধ ও শিশুরা শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছে।
আজিম উদ্দিন জানান, টেংরাটিলা স্কুল থেকে বাজার পর্যন্ত সড়কে নিচ থেকে পানির সঙ্গে গ্যাস উদগীরণ হচ্ছে।
এর আগে গত ২৭ অক্টোবর টেংরাটিলা এলাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বুদবুদ আকারে পানিমিশ্রিত গ্যাস উদগীরণ শুরু হয়। খবর পেয়ে ৩০ আক্টোবর সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম টেংরাটিলা পরিদর্শন করে পেট্রোবাংলা ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রালয়সহ সিলেট বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠান।
এ বিষয়ে গ্যাসক্ষেত্রের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান (ইন্সপেক্টর) শামছুদ্দিন বলেন, টেংরাটিলায় নাইকো বা বাপেক্সের কেউ থাকে না। এখানে বর্তমানে তার নেতৃত্বে ২৩ জন নিরাপত্তাকর্মী রয়েছেন।
তিনি আরো জানান, সিকুরেট প্রাইভেট লিমিডেট নামের এক কোম্পানির মাধ্যমে তারা নাইকোর নিরাপত্তায়কর্মী হিসেবে এখানে কাজ করছেন। কিন্তু গ্যাসক্ষেত্রটি সম্পর্কে তাদের তেমন কোনো ধারণা নেই।
জানতে চাইলে নাইকো কিংবা বাপেক্সের দায়িত্বশীল কারো নাম-পরিচয় ও মোবাইল ফোন নম্বর তিনি দিতে পারেননি তিনি।
এর আগে ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন দু’দফা বিস্ফোরণে গ্যাসক্ষেত্রের প্রোডাকশন কূপের রিগ ভেঙে প্রচণ্ড গর্জন এবং ভয়াবহ কম্পনসহ ২০০ থেকে ৩০০ ফুট পর্যন্ত ওঠানামা করতে থাকে আগুন।
দুই দফা বিস্ফোরণে গ্যাসক্ষেত্রের মাটির উপরে ৩ বিসিক গ্যাস পুড়ে যাওয়া এবং ৫ দশমিক ৮৯ থেকে কমপক্ষে ৫২ বিসিক গ্যাসের রিজার্ভ ধ্বংস হওয়াসহ আশপাশের টেংরাটিলা, আজবপুর, গিরিশনগর, কৈয়াজুরি ও শান্তিপুরের মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত ও পরিবেশের ক্ষতি হয়। বিস্ফোরণের পর আশপাশের মানুষের সামান্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে কিছুদিন পরই নাইকো তাদের সব সরঞ্জামাদি নিয়ে টেংরাটিলা থেকে চলে যায়।
১৯৫৭-৫৮ সালে এ গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হয়। সে সময়ে টেংরাটিলার গ্যাসক্ষেত্রটির দায়িত্ব নেয় পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম লিমিটেড (পিটিএল)। ১৯৫৯ সালে বৃটিশ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয় পিটিএল এর। এরপর থেকে বৃটিশ কোম্পানি গ্যাস উত্তোলন করে। এ গ্যাসক্ষেত্র থেকেই ছাতক সিমেন্ট কোম্পানিতে সংযোগ দেওয়া হয়।
পরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গ্যাসক্ষেত্রটির নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম লিমিটেড (বিপিএল)। ১৯৮২ সালে গ্যাসের চাপ কমে গেছে দাবি করে টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পাকিস্তান আমলে গ্যাসক্ষেত্রটির কূপের গভীরতা ছিল প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ফুট। কিন্তু ২০০৫ সালে নাইকো প্রায় ৩ হাজার ফুট গভীরে যেতেই দুর্ঘটনা ঘটে।