প্রবীণদের সিনিয়র সিটিজেন ঘোষণা করলেন রাষ্ট্রপতি

ঢাকা: দেশের ১ কোটি ৩০ লাখ ষাটোর্ধ প্রবীণ নাগরিককে সিনিয়র সিটিজেন ঘোষণা করলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতির এই ঘোষণার মাধ্যমে প্রবীণদের বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হলো।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এই ঘোষণা দেন। সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় অধ্যাপক এম আর খান, সমাজকল্যাণ সচিব নাছিমা বেগম, প্রবীণ হিতৈষী সংঘের মহাসচিব এএসএম আতীকুর রহমান।

রাষ্ট্রপতি বলেন, “প্রবীণ জনগোষ্ঠী আমাদের গুরুজন এবং পথ প্রদর্শক। তাদের যথাযথ মর্যাদা, খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বসবাসের সুবিধাসহ সামাজিক সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকলকে আন্তরিক হতে হবে।

‘আমাদের ঐতিহ্যগত পারিবারিক বন্ধন আরও দৃঢ় করতে হবে। পাশাপাশি শৈশব থেকেই শিশুদের গুরুজনদের সম্মান করার সুমহান শিক্ষা দিতে হবে। এটাই আমাদের চিরকালীন ঐতিহ্য বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

যারা এ সমাজ গড়ছেন, তাদের শেষ জীবন স্বস্তিময় করতে সন্তানদেরই দায়িত্ব নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন "সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রবীণদের সম্মান জানানোর জন্য এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি বাংলাদেশের সকল সম্মানিত প্রবীণকে সিনিয়র সিটিজেন ঘোষণা করছি। সাথে সাথে তাদের সুস্বাস্থ্য, মর্যাদাপূর্ণ জীবন এবং সার্বিক কল্যাণ কামনা করছি।"

তিনি আরো বলেন, “পরিবারই প্রবীণ নাগরিকের সবচেয়ে স্বস্তিময় ও নিরাপদ স্থান। এ কারণে পরিবারে যাতে প্রবীণ ব্যক্তিরা স্বাচ্ছন্দ্য ও মর্যাদার সাথে অন্য সদস্যদের সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করতে পারেন, তার দায়িত্ব সন্তানদের নিতে হবে।”

পশ্চিমা দেশগুলোর মতো নির্ধারিত দিনে ‘ফাদারস ডে’ বা ‘মাদারস ডে’ উদযাপন না করে বাংলাদেশে প্রতিটি দিন প্রতিটি পরিবারে ‘প্যারেন্টস ডে’ উদযাপিত হবে- বিশ্ব প্রবীণ দিবসে এ প্রত্যাশাও করেন রাষ্ট্রপতি।

প্রবীণদের জ্যেষ্ঠ নাগরিকের স্বীকৃতি দিতে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর জাতীয় প্রবীণ নীতিমালার খসড়া অনুমোদন করে সরকার। এরপর জাতীয় অধ্যাপক এমআর খানের নেতৃত্বে একটি কমিটি এ বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে।

এই ঘোষণার ফলে বাংলাদেশের ১ কোটি ৩০ লাখ নাগরিক বিভিন্ন সরকারি সুবিধা পাবেন। জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের স্বল্পমূল্যে ও অগ্রাধিকারভিত্তিতে স্বাস্থ্য, আবাসন ও যানবাহনের সুবিধা পাবেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সমাজ ও রাষ্ট্রে বয়স্ক ব্যক্তিদের অবদান অপরিসীম। জীবনের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়ে তারা যাতে মর্যাদা, স্বস্তি ও নিরাপদে জীবন যাপন করতে পারেন, তার সব ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। হাসপাতাল, ব্যাংক, অফিস, আদালতসহ নাগরিক সেবার সর্বক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।’

গত বছরের ১৭ নভেম্বর ‘জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা, ২০১৩’ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। নীতিমালায় প্রবীণ ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘জ্যেষ্ঠ নাগরিক’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ প্রবীণ রয়েছেন। এরমধ্যে বর্তমানে ২৭ লাখ ২৩ হাজার প্রবীণকে মাসে ৪০০ টাকা করে বছরে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ভাতা দেওয়া হয়। এই কর্মসূচি ১৯৯৬ সালে শুরু হয়েছিল।

বিআইডিএসের এক পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার চার দশমিক ৯৮ শতাংশ ছিল প্রবীণ জনগোষ্ঠী এবং জনসংখ্যা প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২০৫০ সালে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর হার হবে ২০ শতাংশ। তখন বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজন মানুষের মধ্যে একজন হবেন প্রবীণ।

x