উদ্বোধনের দেড় মাসেও খোলেনি এমসি কলেজ ছাত্রাবাস

সিলেট: আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের দেড় মাস পার হয়ে গেলেও খোলে দেওয়া হয়নি শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাস। ফলে ছাত্রাবাসে উঠতে পারছে না সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

যার ফলে শিক্ষার্থী শূন্য রয়েছে সার্বক্ষণিক শিক্ষার্থীদের মুখরিত এ ছাত্রাবাসটি।

এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ বলেছেন, সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন থাকলেও শুধু মাত্র গ্যাস সংযোগ না থাকায় খোলে দেওয়া যাচ্ছেনা ছাত্রাবাসটি। তবে গ্যাস সংযোগ পেলেই ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে ছাত্রাবাস খুলে দেওয়া হবে।

ছাত্রাবাস এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুরনো শৈলীতেই সম্পূর্ণ রূপে কাঠ ও টিনের চালার পুনর্নির্মান ও সংস্কার কাজ করা হয়েছে ৬টি ব্লকের। তৈরি হয়েছে নতুন চেয়ার টেবিল ও খাট। লাগানো হয়েছে নতুন ফ্যান ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী। কিন্তু ছাত্রদের জন্য খুলে না দেওয়ায় এই ছাত্রাবাস এলাকায় দেখা মেলেনি কোনো প্রাণচাঞ্চল্য।

২০১২ সালের ৮ জুলাই সন্ধ্যা রাতে ছাত্রলীগ-শিবির সংষর্ষের পর বহিরাগত ছাত্রলীগের ধরিয়ে দেওয়া আগুনে পুড়ে যায় ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রাবাস। আগুনে পুড়ে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রাবাসের ধ্বংসস্তুপ দেখে তখন কেঁদেছিলেন অনেকে। খোদ শিক্ষামন্ত্রীও আবেগ ধরে রাখতে পারেননি।

এরপর পুরোনো শৈলী রেখেই ভস্মীভূত ছাত্রাবাস পুনর্নির্মাণ ও আংশিক পুড়ে যাওয়া ব্লকগুলোর সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্কার কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এমসি কলেজেরই সাবেক ছাত্র অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

এরই ধারাবাহিকতায় ৪কোটি ৯৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ব্যয়ে পুড়ে যাওয়া ছাত্রাবাসের ১, ২ ও ৪ নং ব্লক পুনর্নির্মাণ এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ ব্লক- ৩ ও ৫ ছাড়াও শ্রীকান্ত ব্লক, ছাত্রাবাস সুপার কোয়াটারের ৫টি ব্লক, ছাত্রাবাস সুপার কোয়ার্টার (ব্লক-শ্রীকান্ত)সহ অপর একটি ছাত্রাবাসের মেরামত ও সংস্কার কাজ করা হয়।

ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষার্থীদের দ্রুত পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রাথমিক ভাবে কম ক্ষতিগ্রস্থ তিনটি ব্লক পুনর্নির্মাণ, অন্য ছাত্রবাসগুলোসহ ছাত্রাবাস সুপারের কার্যালয় সংস্কার সম্পন্ন করে তা কলেজ কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর। ২০১৪ সালের ৯ অক্টোবর এর উদ্বোধন করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।

বাকি ছিলো ছাত্রাবাসের ১ ও ২ নং ব্লক। সর্বশেষ গত ১৪ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই দুটি ব্লকেরও উদ্বোধন করে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। উদ্বোধনের পার হয়ে গেছে দেড় মাস। তারপরও খোলে দেওয়া হয়নি এই ছাত্রাবাস।

এদিকে ছাত্রাবাস খোলে না দেওয়ায় চরম হতাশ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অবস্থা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা মেস ভাড়া করে থাকলেও দরিদ্র শিক্ষার্থীরা রয়েছেন বিপাকে। আর এসব কারণেই শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি লেখাপড়ায় মনযোগী হতে পারছে না। এতে হুমকির মুখে পড়েছে তাদের শিক্ষা জীবন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্রাবাস না থাকায় সবাইকে বাহিরে মেস ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে। আবার ভাড়া বেশি হওয়ায় অনেকেই গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। ফলে শিক্ষা জীবনে মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে। দ্রুত ছাত্রাবাস খুলে দিয়ে নিময়নীতি অনুসরণ করে প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্থান দেওয়ার দাবি তাদের।

অন্যদিকে, ছাত্রাবাস সিট পাওয়ার আশায় বুক বেঁধে আছেন ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, যারা বৈধ আবাসিক ছাত্র, যারা ছাত্রাবাস পোড়ানোর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তারাই যেনো পুনরায় ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্দ পান।

এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ বলেন, আগের বৈধ ছাত্রদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্ধ দেওয়া হবে। তবে যাদের ছাত্রবাসে থাকার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তাদেরকে সিট বরাদ্ধ দেওয়া হবেনা। এছাড়া আগের নিয়মানুযায়ী মেধার ভিত্তিতে নতুন ছাত্রদের নির্ধারিত আসন বরাদ্ধ দেওয়া হবে।

শিক্ষামন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাস বুঝে পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্রাবাস আমরা বুঝে পেয়েছি। কিন্তু গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ছাত্রাবাস খোলে দিতে বিলম্ব হচ্ছে। আমরা জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত এটি সমাধান করার চেষ্ঠা করছি। আমরা আশা করছি ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকেই ছাত্রাবাসটি পুনরায় চালু করতে পারবো।’

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ৮ জুলাই কলেজ হোস্টেলে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বহিরাগত ছাত্রলীগের দেওয়া আগুনে সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয় কলেজের ছাত্রবাসটি।

x