আনোয়ার স্যারকে সবাই ভয় পেতো
জুবিলীতে ভর্তি হই ২০০৮সালে, ক্লাস সিক্সে। হাইস্কুলের প্রথম বছর, যা দেখছি সবই নতুন লাগছিল।
স্কুলে পিটি করতে গিয়ে বেশ রাগী চেহারার একজন স্যারের প্রতি নজর আটকাল। সেই স্যারকে স্কুলের সব ছাত্ররা ভয় পায়, উনাকে দেখলে দুষ্টুমি করা দূরে থাক, সবাই তটস্থ হয়ে থাকতো।
জানতে পারলাম স্যারের নাম আনোয়ার স্যার, স্পোর্টস টিচার। স্যার যতদিন জুবিলী স্কুলে ছিলেন, স্কুল খেলাধূলাতে সবসময়ই ভাল অবস্থানে থাকতো। স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজেও ভাল পারফরমেন্স করত ছেলেরা। শুধু খেলাধূলাই নয়, স্যারকে সবাই খুব ভয় পেতো বলে স্কুলে কখনো বিশৃঙ্খলা হতো না, কোন ছাত্র দুষ্টুমি করতো না, কোন শিক্ষকের সাথে বেয়াদবি করতো না। কাউকে গোলমাল বাধাতে দেখলে স্যার খুব মারতেন।
আমরা আমাদের বাবাদের সময়কার শিক্ষকদের গল্পে যেমনটা শুনেছি, ঠিক সেরকম একজন মানুষ ছিলেন এই আনোয়ার স্যার। স্যার ধার্মিক এবং অমায়িক মানুষ ছিলেন, সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত ভাল মানুষ ছিলেন।
আমরা তাঁকে খুব বেশিদিন পাইনি। সম্ভবত বছর দেড়েক পরেই বদলি হয়ে চলে যান স্যার। আসল কথা হল, স্যার চলে যাওয়ার পরই আমরা বিশৃঙ্খল হয়ে যাই, ছাত্র হিসেবে বেয়াদব প্রকৃতির হয়ে যাই। সত্যিকার অর্থে, জুবিলীর শৃঙ্খলা বা অবস্থানটা ভেঙ্গে পড়ে অনেকটাই… নিশ্চয়ই পরোক্ষভাবে হলেও স্যার না থাকাতেই এটা হয়।
আসলে হাইস্কুলের সময়টা উপযুক্ত শাসনে বেড়ে ওঠার সময়। ঠিক সেই সময়টাতে একজন শিক্ষক যদি একজন ছাত্রকে নীতি-আদর্শ শেখানোর জন্য কোন ছাত্রকে প্রহারও করেন, তাতে দোষের কিছু দেখি না। বরঞ্চ, মারের ভয়ে হলেও সেই ছাত্র ভালকিছুই শিখবে।
এই ছিলেন একজন আনোয়ার স্যার। স্যারকে খুব বেশিদিন পাইনি দেখে তাঁর সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানি না। তিনিও আমাকে চিনতেন না, কারণ আমি তখন ছোট ক্লাসে, খুব একটা পরিচিতও ছিলাম না সবার কাছে। কিন্তু, স্যার একজন ভাল মানুষ ছিলেন, তাঁকে আমি ভয় পেতাম- এটুকু মনে আছে।
আমাদের সেই আনোয়ার হোসেন পাটওয়ারী স্যার আজ চিরদিনের জন্য চলে গেছেন তাঁর ছাত্রদের ছেড়ে। আসলে আমি গুছিয়ে কিছুই লিখতে পারছি না। কষ্ট হচ্ছে খুব, টগবগে শক্তিশালী একজন মানুষ হিসেবে দেখেছিলাম যাকে, তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের বিছানায় ধুকতে ধুকতে মারা গেলেন। একজন শিক্ষকের মৃত্যু খুব পীড়াদায়ক…খুব… জুবিলী আপনাকে মনে রাখবে স্যার, সবসময়।
ভাল মানুষেরা আজকাল খুব দ্রুত মরে যাচ্ছেন, হুট করে মরে যাচ্ছেন। আল্লাহ!
আল্লাহ আমাদের স্যারকে জান্নাত নসিব করুন, আমীন। সবাই তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করবেন।