সাফল্যের জন্য প্রয়োজন সততা : ড. জহিরুল
সুনামগঞ্জ: প্রাথমিক অবস্থায় সর্বাধুনিক ক্যান্সার সনাক্তকরণ ডিভাইস (এক ধরনের যন্ত্র) আবিস্কারক ড. জহিরুল আলম সিদ্দিকী সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিষয়ক বক্তৃতা রেখেছেন।
বুধবার দুপুর ১টায় কলেজ মিলনায়তনে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন ড. জহিরুল আলম সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, ‘একটা ডিভাইস বা জিন আবিষ্কার করা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো তা মানবসমাজের কোন কাজে আসল কি না। সাফল্য লাভ করতে হলে সততা, শৃঙ্খলা ও কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে।
ক্যান্সারে মিলিয়ন মানুষ মারা যায়, চিকিৎসায় খরচ হয় প্রায় দুইশত ত্রিশ কোটি ডলার। আমাদের দেশে এর দুইটি সমস্যা রয়েছে, একটি সামাজিক, অন্যটি অর্থনৈতিক। এটি নিয়ে কি কিছুই করার নেই? এই চিন্তা ও স্বপ্ন নিয়ে আমার এই প্রচেষ্টা।’
ড. সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাকে হাফ মিলিয়ন ডলার দেয়া হয়েছিল ক্যান্সার নিরাময়ের গবেষণা করার জন্য। আমার কাজ ছিল ক্যান্সার শরীরে কিভাবে কাজ করে এটি নির্ণয় করা। আমার তৈরি এই ডিভাইসের মূল্য সর্বোচ্চ ১০০-১৫০ ডলারের মধ্যে থাকবে।’
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ও দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরের আয়োজনে দেওয়া বিজ্ঞান বিষয়ক বক্তৃতায় উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন বিজ্ঞানী ড. সিদ্দিকী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মেজর ছয়ফুল কবীর চৌধুরী। সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক সৈয়দ মহিবুল ইসলাম, অধ্যাপক কল্পনা তালুকদার, দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরের সম্পাদক পঙ্কজ দে, প্রথমআলোর জেলা প্রতিনিধি খলিল রহমান প্রমুখ।
ড. সিদ্দিকী আরো বলেন, ‘মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সাথে কখনো দেখা হলে তাঁর কাছে সিলেট অঞ্চলে একটি ক্যান্সার গবেষণাকেন্দ্র করার জন্য অর্থ চাইবো, বাংলাদেশের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ যাদের আর্থিক ক্ষমতা কম, ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা তাদের সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসার লক্ষেই এই গবেষণাকেন্দ্র কাজ করবে।’
ক্যান্সার সম্পর্কে জহিরুল সিদ্দিকীর দীর্ঘ ও তথ্যবহুল বক্তৃতা উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তন্ময় হয়ে শোনেন। প্রায় পৌনে একঘণ্টা দীর্ঘ বক্তব্য রাখেব তিনি।
উল্লেখ্য, নিম্ন আয়ের দেশের মানুষদের কাছে সহজলভ্য হবে এমন একটি যন্ত্রের মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার সনাক্তকরণের স্বপ্ন নিয়ে ড. জহিরুল আলম সিদ্দিকী ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ান রিসার্চ কাউন্সিল থেকে ৩ লাখ ৭২ হাজার ডলার এর অনুদান পেয়েছিলেন।
সেই সাফল্যের পথ ধরে তিনি ন্যানোশীয়ারিং নামের এমন এক ধরণের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন যার মাধ্যমে মানব রক্তের অভ্যন্তরে অবস্থিত অতিবিরল এক ধরণের কোষ (সার্কুলেটিং টিউমার সেল বা সিটিসি) সুনির্দিষ্টভাবে সনাক্ত করতে সমর্থ হয়েছেন, যেটি প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যান্সারের সুনির্দিষ্ট তথ্য বহন করে।
সাফল্যের ধারাবাহিকতায় গত বছরের শেষের দিকে ড. সিদ্দিকী আবারও অস্ট্রেলিয়ান রিসার্চ কাউন্সিল থেকে সাড়ে তিন লাখ ডলার অনুদান পান। বর্তমানে তিনি ন্যানোশীয়ারিং এর ভৌত গুণাবলী নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে এই পদ্ধতির পরবর্তী প্রজন্মের উৎকর্ষ সাধনের চেষ্টা করছেন। তার এই উদ্ভাবনকে সাধারণ মানুষের ব্যবহার উপযোগী করার প্রয়াস হিসেবে তিনি গত ১৭ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল হেলথ এন্ড মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল থেকে ৪ লাখ ১১ হাজার ডলার অনুদান পেয়েছেন।
ড. সিদ্দিকী বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব কুইনসল্যান্ডের অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট ফর বায়ো ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সিনিয়র গবেষক হিসাবে কাজ করছেন। খ্যাতি অর্জন করা এই তরুণ বিজ্ঞানীর গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী গ্রামে।