১২ ডিসেম্বর দেওয়ান মহসিন রাজা চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী
হাছন রাজার প্রপৌত্র দেওয়ান মহসিন রাজা চৌধুরী ছিলেন তার যোগ্য উত্তরসূরি। মা বাবা আদর করে তাকে ডাকতেন এমরান বলে। সবসময় তিনি ডুবে থাকতেন সংগীত আর নাটকে। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। একাধারে সাহিত্যিক, কবি, গীতিকার, সংগীতশিল্পী, সুরকার, নাট্যকার, অভিনেতা, কেরিক্যাচার, ভাষাসৈনিক এবং মুক্তিযোদ্বা। ছাত্র ইউনিয়নের দলীয় সংগীতের বাণী ‘যাক যাক নিপাত যাক, সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক’ তিনি রচনা করেছিলেন।
আজ তাঁর ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী। ২২ ফেব্রুয়ারী ১৯৩৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন লক্ষণশ্রীতে। পিতার নাম দেওয়ান তহসিনুর রাজা চৌধুরী, মাতা সাইফুননেছা চৌধুরী। নানার বাড়ী সদর থানার মোহনপুর গ্রামে। সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে তিনি বিএ পর্যন্ত লেখাপড়া করেন।
১৯৪৮ সালে ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসে কবি গোলাম মোস্তফার রাজা কাব্যগ্রন্থের ‘পরিচয়’ কবিতাটি আবৃত্তি করে ছোট্ট মহসিন রাজা দর্শক শ্রোতাদের মন জয় করেন। ১৯৫০ সালে প্রথম ‘সত্যের পথে’ নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৬৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বের ব্রিটিশ কাউন্সিল মিলনায়তনে তার রচিত ‘জীবন হতে বড়’ নাটক মঞ্চায়ন করেন।
১৯৬৭ সালে তিনি রেডিও এর সিলেট কেন্দ্রের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে তালিকাভূক্ত হন এবং প্রথম শ্রেণীর গীতিকার হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেন। কামাল আহমদের ‘পরওয়ানা’ রওনক চৌধুরীর ‘ভাওয়াল সন্যাসী’ ছায়াছবিতে অভিনয় করেন। চলচিত্রশিল্পী শওকত আকবর, আনোয়ার হোসেন, গোলাম মোস্তফা, খলিলুল্লাহ খাঁন, নেজামতুল্লা, খান মনির, আজহার, খসরু উদ্দিন, ওয়াহিদুর রহমান, মিনু রহমান, কালিপদ দাস ও নারায়ণ ঘোষ মিতা সহ অনেকের সাথে অভিনয় করেছেন।
৬০’র দশকে তিনি ঢাকায় জসিম উদ্দিন রোডে সাহিত্য আসরের নিয়মিত সদস্য ছিলেন। এই আসরে কবি জসিম উদ্দিন, আকবর হোসেন, আব্দুল হাই মাশরাফী, কবি আজিজুর রহমান, অনু ইসলাম ,সানাউল হক, দেওয়ান আব্দুল হামিদ প্রমুখের সাথে তার পরিচয় হয়। ১৯৬৯ সালে তিনি গণআন্দোলনে এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধের সাংস্কৃতিক সংগঠক ও সম্মুখসমরে অস্ত্র, গোলাবারুদ, রসদ সরবরাহকারী স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে দায়িত্ব¡ পালন করেন।
৯০ ও ৯৩ সালে কলকাতার দলবল নিয়ে লোকগীতি উৎসবেও যোগ দেন। মৃত্যুর পূর্বে মহসিন রাজা হাছন রাজার জীবনভিত্তিক নাটক রচনা করেছিলেন। এছাড়া ‘সুরমার পাড়ে’ নামে একটি খন্ড চলচিত্রের কাহিনী লিখেছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে হয়ত সেগুলো আলোর মুখ দেখতো। প্রথম জীবনে ছিলেন কেরিক্যাচারিস্ট। পরে অবশ্য সেটির ধারাবাহিকতা রক্ষা করেননি।
প্রায় আড়াই হাজার গানের রচিয়তা, প্রায় ২ শতাধিক নাটকে নির্দেশনা এবং অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। ২০০৪ সালে ‘গীত সম্ভার’ নামে একটি গানের বই প্রকাশ করেন। ২০০৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মহসিন রাজা মারা যান।
মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাভরে তাঁকে আমরা স্মরণ করছি।