ফারিন ও ঐশীর প্রিয় রঙ গাড় নীল

ফারিন ও ঐশী দুই বন্ধু। দু’জনেই পড়ছে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে। আগামী বছর উচ্চামধ্যমিক পরীক্ষা দেবে তারা। পড়ালেখার পাশাপাশি দু’জনেরই রয়েছে অনেক গুণ! সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও দু’জনের সরব উপস্থিতি। পুরো শহরেরই পরিচিত এই দুই মেধাবী মুখের সাথে আড্ডা আর কথা হল এক বিকেলে।

ফারিন ও ঐশী জানায় তাদের নানান ইচ্ছা ও স্বপ্নের কথা।

ফারিনের পুরো নাম ফারজিয়া হক ফারিন। বন্ধুরা ডাকে ফড়িং। আসলে সে নিজেকেও ফড়িংয়ের মতই স্বাধীন ভাবে, পছন্দ করে ঘুরতে, বেড়াতে, ছবি আঁকতে, গান গাইতে।

ফারিনের অনেক গুণ। ফারিন বলল, ‘সবার আগে আমি একজন শিক্ষার্থী। আমি পড়ছি, এটাই আমার পরিচয়।’ এই ফারিন ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত। করছে আবৃত্তি, উপস্থাপনা, গান, ছবি আঁকা। প্রায় সবক্ষেত্রেই তার প্রতিভার ঝলকানি অন্যদের মুগ্ধ করে।

ঐশীর জন্য অন্যকোন নাম খুঁজে পায়নি বন্ধুরা। অবশ্য কেউ ডাকে ‘ঐশ’, কেউ শুধু ‘ঐ’! ওর পুরো নাম রাকিবা ইসলাম ঐশী। বাড়ি সুনামগঞ্জের অন্য একটা উপজেলায় হলেও, ক্লাস নাইন থেকে এসসি গার্লস স্কুলে পড়ছে সে। চমৎকার গান গায়। যেকোন অনুষ্ঠানে ডাক পড়ে তার। তার অনন্যসাধারণ কণ্ঠের জন্য সবাই তাকে খুব পছন্দ করে। ঐশী আবার আবৃত্তিও করতেও পারে চমৎকার।

ফারিনের বাবা মোঃ ফজলুল হক ব্যবসা করছেন। মা কানিজ সুলতানা একজন শিক্ষিকা। ফারিন বলল, ভালোকাজ করার জন্য সসবসময় উৎসাহ যোগান তাঁরা। বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণাতেই পড়ালেখার বাইরে অন্যান্য কাজের সঙ্গে সে যুক্ত। মা-বাবা ও একবোনসহ চারজনের ছোট্ট পরিবার ফারিনদের।

ঐশীর বাবা রফিকুল ইসলাম সরকারি চাকুরি করেন, মা আতিফা ইসলাম গৃহিণী। ঐশীর ছোট এক ভাইও আছে। মা-বাবা সবসময়ই স্বপ্ন দেখেন, ঐশী বড় হয়ে ভাল মানুষ হবে। ওর গান গাওয়ার পেছনেও বড় অনুপ্রেরণা ওর মা।

ঐশী ও ফারিন, দু’জনের মধ্যে আবার খুব মিল। কলেজে হোক, বাইরে অন্যকোথাও হোক, একসঙ্গেই থাকে তারা। যাকে বলে একেবারে গলায় গলায় ভাব।

আচ্ছা, এতসব নানারকম গুণ তোমরা দু’জন কোত্থেকে পেলে?- এই প্রশ্ন করতেই, খিলখিল করে হেসে ওঠল ঐশী আর ফারিন। ‘আমাদের আবার গুণ কিসের! আমরা তো অন্যসবার মতই!’ এই বলে কথাটা হেসেই উড়িয়ে দিল তারা। তবে পরে জানা গেল, ঐশীর গানের চর্চাটা অনেকটা পারিবারিকভাবেই। তার খালা গান গাইতেন। খালার কাছে হাতেখড়ি। সেই থেকে তার মায়েরও আগ্রহ। আর আগ্রহ ছিল বলেই তো আজ ওর এই কদর!

ফারিনের কণ্ঠে যেন ঈর্ষার সুর, ‘ইশ! আমি যদি ঐশীর মত করে গান গাইতে পারতাম!’

স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতায় বরাবরই তারা দু’জন মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। ছোটবেলা থেকে ফারিন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে আর বারবার পেয়েই চলেছে পুরষ্কার। তার ঝুলিতে সর্বশেষ সংযোজন, সরকারিভাবে আয়োজিত সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতার বিভাগীয় চ্যাম্পিয়নের খেতাব। এছাড়া গণিত অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন হওয়া, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় দলকে নেতৃত্ব দিয়ে বিজয়ী হওয়া, আবৃত্তিতে প্রথম হওয়া, ছবি আঁকায় সেরা হওয়া- কি নেই তার শোকেসে! এখন পর্যন্ত নাকি ওর ঝুলিতে প্রায় ২৫০ সার্টিফিকেট জমেছে।

‘এতসব সার্টিফিকেট কেজি দরে বিক্রি করলেই তো তুমি ধনী হয়ে যাবে!’-ঠাট্টা করে এ কথা বলতে ও খুব মজা পেল।

আর ঐশীর গানের তো তুলনাই হয়না। অনেকে বলে, ওর কণ্ঠ নাকি সৃষ্টিকর্তার নিজ হাতেই বানানো! মেরিডিয়ান-চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ প্রতিযোগিতায় একবার প্রায় শেষপর্যন্ত গিয়েছিল ঐশী, হয়তো ভাগ্য খারাপ ছিল তাই চূড়ান্ত ফলটা পায়নি।

কথা বলতে বলতে জানা গেল আরো অনেককিছু। পড়ালেখায় তারা দু’জনেই সমান তালে ভাল ফলাফল করছে। এসএসসি পরীক্ষায় ঐশী পেয়েছিল গোল্ডেন এ প্লাস, ফারিন এ প্লাস। ফারিন অবশ্য অন্যদিক থেকে এগিয়ে, প্রথমবারের জেএসসি পরীক্ষায় পুরো শহরের মেয়েদের মধ্যে একা এ প্লাস পেয়েছিল সে।

এরপর প্রসঙ্গে বদলে জানতে চাওয়া হল ওদের নানা প্রিয় বিষয় সম্পর্কে। প্রথম প্রশ্নের উত্তরেই দু’জনের পছন্দ মিলে গেল। ফারিন ও ঐশীর প্রিয় রঙ গাড় নীল। এই রঙ কেন প্রিয়? ওরা বলল, গাড় নীলের মধ্যে অন্যরকম এক ভালোলাগা খুঁজে পায় ওরা।

কথায় কথায় আরো অনেক ভালোলাগার বিষয় জানালো ওরা। ফারিন অবসরে বই পড়তে খুব ভালোবাসে। গল্প করা, ঘুরতে যাওয়া আর আড্ডা দেয়াও খুব পছন্দ ওর। ঐশীও ঘুরতে, আড্ডা দিতে আর গল্প করতে ভালোবাসে। ফারিনের প্রিয় বই বিভূতিভূষণের চাঁদের পাহাড়, প্রিয় লেখক জাফর ইকবাল। অন্যদিকে, জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি’ ঐশীর সবচেয়ে পছন্দের বই। ওর ভাল লাগে জহির রায়হানের লেখা। আবার, দু’জনের প্রিয় চলচ্চিত্রই মাটির ময়না।

ফারিন বলল, বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা ওর খুব পছন্দ, আর পছন্দের খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান। এক্ষেত্রে ঐশীর পছন্দ একটু ভিন্ন, ওর সবচেয়ে প্রিয় খেলোয়াড় আর্জেন্টিনার মেসি।

এখন বিজয়ের মাস। ওরা দু’জন দেশকে নিয়েও ভাবে। দু’জনেই একসঙ্গে বলল, দেশের জন্য কিছু করব। আমাদের দেশটা অনেক সুন্দর।

বড় হয়ে কে কী হতে চাও?
ফারিন বলল, ওর ইচ্ছা সেনা কর্মকর্তা হবে। ওর বাবারও স্বপ্ন ছিল সেনা কর্মকর্তা হবার, কিন্তু তিনি পারেন নি। ফারিন তার বাবা আক্ষেপ ঘুচাতে চায়। সেনা বাহিনীর কর্মকর্তাদের দেখতে খুব ভাল লাগে ওর।

ঐশীর ইচ্ছা, একজন ভাল শিল্পী ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ হবে সে। ও বলল, ‘ভালোবাসি তাই গান গাই, আর আমার মা আমার পৃথিবী।’

শেষ প্রশ্ন ছিল ফারিনের প্রিয় উক্তি সম্পর্কে। ফারিন বলল, ‘স্বপ্ন সেটা নয় যেটা মানুষ ঘুমিয়ে দেখে, স্বপ্ন সেটাই যেটা মানুষকে ঘুমোতে দেয় না।’

স্বপ্নবতী ফারিন ও ঐশীর জন্য শুভকামনা।

x