বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ নামে নতুন ইউনিট হচ্ছে

ঢাকা: বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন নামে পুলিশের নতুন একটি ইউনিট গঠন করা হচ্ছে। এই ইউনিটটি শুধুমাত্র বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় কাজ করবে।

বর্তমানে দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় কাজ করছে আর্মড পুলিশ ব্যটালিয়ন। নতুন এই ইউনিট গঠন হওয়ার পর সেখানে নিয়োজিত আর্মড পুলিশ অফিসারের সংখ্যা বাড়বে। আর নাম বদলে হবে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। পোশাক আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সাদৃশ্য যে কোনো এক ধরনের হবে।

বর্তমানে এ প্রস্তাবনাটি গেজেট হওয়ার অপেক্ষায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

প্রস্তাবে বলা হয়, বর্তমানে বিমানবন্দরের দায়িত্বে নিয়োজিত এপিবিএনকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য সুনির্দিষ্ট করা জরুরী। কেননা বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও দক্ষ হয়ে ওঠার পর প্রচলিত নিয়মে তাদেরকে ২/৩ বৎসর পর অন্য স্থানে বদলি করা হলে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষিত সদস্যের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তদুপরি এতে নিরাপত্তা রক্ষার কৌশলগত ও টেকনোলজি নির্ভর নিরাপত্তা-ব্যবস্থাপনাও ভেঙে পড়তে পারে। এমতবস্থায় ‘এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন’ নামকরণে বিমানবন্দরে বর্তমানে নিয়োজিত ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন বা অন্য আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন’কে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রক্ষায় স্থায়ীভাবে নিয়োজিত করা যৌক্তিক হবে বলে অনুমিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী’র সভাপতিত্বে গত ২০১০ সালের ১৩ এপ্রিল ১০ম গোয়েন্দা সমন্বয় সভায় হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ সব বিমান বন্দরের নিরাপত্তা জোরদারকরণ এবং বিমানবন্দরে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ ও দৃশ্যমান নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে আর্মড পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে ২০১০ সালের ১ জুন হতে বিমানবন্দরে এপিবিএন মোতায়েন করা হয়।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়োজিত হওয়ার পর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যগণকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও অপরাধ দমনের কলাকৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। আপদকালীন দ্রুত মোতায়েন হয়ে সন্ত্রাসী হামলা ঠেকানো ও কার্যকরী নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সক্ষম ২৪ সদস্যের সমন্বয়ে ‘ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি)’ গঠন করা হয়। পরে এদেরকে ডিএমপি’র সোয়াট টিমের আদলে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
নাশকাতমূলক কার্যক্রম নিবারণে প্রো-অ্যাকটিভ পুলিশিং প্রবর্তন করা হয়। বিমানবন্দরে আগত যাত্রী, দর্শনার্থী ও কর্মরত ব্যক্তিদের বেশে সম্ভাব্য অপরাধীদের সনাক্ত করার লক্ষ্যে চেকিং, গার্ডিং ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষনের মাধ্যমে নিরন্তর বিবিধ পুলিশি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।

মানব, মাদক, অস্ত্র, অবৈধ মুদ্রা পাচার ও স্মাগলিং এর মতো রাষ্ট্রের নিরাপত্তার হুমকিস্বরূপ অপরাধসমূহ নিবারণের জন্য বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থা/গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বিমানবন্দরের আগমন ও বর্হিগমন পথে নিরাপত্তা বেষ্টনি, ভিআইপি ও ভিভিআইপি টার্মিনালসহ সব স্থাপনায় আর্মড পুলিশ মোতায়ন করা হয়। ফলে বিমানবন্দরে অনাকাঙ্খিত ব্যক্তি ও বস্তুর প্রবেশ ও নির্গমন রোধ করা সম্ভব হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বিবিধ স্থাপনা, মালামাল এবং অবস্থানরত বিমানসমূহ আর্মড পুলিশের কঠোর নজরদারীতে থাকায় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা অনেকটা সংহত হয়েছে বলে অনুমিত হয়।

বর্তমানে এয়ারপোর্টে নিয়োজিত আর্মড পুলিশের এপিবিএন-এ একজন অধিনায়ক (পুলিশ সুপার), একজন সহ-অধিনায়ক (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার), ৬জন এএসপি, ৮জন ইন্সপেক্টর (সশস্ত্র), ২৪ জন সাব-ইন্সপেক্টরসহ (সশস্ত্র) অন্যান্য পদবীর মোট ৭৭৪টি পদ রয়েছে। কিন্তু বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের জন্য অধিনায়ক একজনই রেখে অফিসার বাড়ানোর প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে। এখানে ১ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এর স্থলে ৮ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ৭ জন এএসপির স্থলে ১৮ জন এএসপি, ৪০ জন এসআই (নিরস্ত্র), ৫ জন সার্জেন্ট, ১৮ জন এএসআই সর্বমোট ৮১ জন কর্মকর্তার পদসৃজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত পদগুলোর দায়িত্ব বিদ্যমান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অ্যাডমিন অ্যান্ড লজিস্টিক্স-এর দায়িত্ব পালন করবে। প্রস্তাবিত ৭ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের মধ্যে ১ জন অপারেশনস অ্যান্ড পাবলিক অর্ডার, ১ জন ইন্টিলিজেন্স অ্যান্ড সার্ভিল্যান্স, ১ জন প্লানিং অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন, ১ জন মিডিয়া, কো-অর্ডিনেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস, ১ জন ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম, ১ জন স্পেশাল অপারেশনস, সিআরটি, বোম্ব ডিসপোজাল এবং ১ জন ভিআইপি প্রটেকশন অ্যান্ড টেকনিক্যাল উইং-এর দায়িত্ব পালন করবে। প্রস্তাবিত ১১ জন এএসপি এর মধ্যে ৯ জন বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে তিন সেক্টরে তিন পালায় শিফট ইনচার্জ, ১ জন মিডিয়া, কো-অর্ডিনেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস, ১ জন প্লানিং অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন উইং এ দায়িত্ব পালন করবে। প্রস্তাবিত ৫ জন সার্জেন্ট এর মধ্যে ৩ জন বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে তিন পালায়, ১ জন ভিআইপি প্রটেকশন অ্যান্ড টেনিক্যাল, ১ জন ট্রেনিং উইং এ দায়িত্ব পালন করবে। ৪০ জন এসআই (নিরস্ত্র) এর মধ্যে ২১ জন বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে তিন সেক্টরে তিন পালায়, ২ জন মিডিয়া, কো-অর্ডিনেশনস অ্যান্ড কমিউনিকেশনস, ২ জন প্লানিং অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন, ২ জন ইন্টিলিজেন্স অ্যান্ড সার্ভিল্যান্স, ৬ জন ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম, ৪ জন স্পেশাল অপারেশনস, সিআরটি, বোম্ব ডিসপোজাল টিম, ১ জন ফাইন্যান্স অ্যান্ড লজিস্টিক্স, ১ জন অ্যাডমিনস্ট্রেশন এবং ১ জন ট্রেনিং উইং এ দায়িত্ব পালন করবে। প্রস্তাবিত ১৮ জন এএসআই এর মধ্যে ৬ জন বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে তিন পালায়, ২ জন মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন, ২ জন ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম, ২ জন স্পেশাল অপারেশনস, সিআরটি, বোম্ব ডিসপোজাল টিম, ২ জন ফাইন্যান্স অ্যান্ড লজিস্টিক্স, ২ জন অ্যাডমিনস্ট্রেশন এবং ২ জন ট্রেনিং উইং এ দায়িত্ব পালন করবে।

বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন শিমুল বলেন, বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ গঠন এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা মানবপাচার, পাসপোর্ট জালিয়াতি, অবৈধ মুদ্রাব্যবসা, মাদক ব্যবসা, মুদ্রা পাচার, সোনা চোরাচালানসহ নানা অপরাধকার্য প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। এ সব অপরাধকার্য নিবারণ এবং অপরাধীদেরকে গ্রেফতার পূর্বক আইনের আওতায় সোপর্দ করার লক্ষ্যে বিমানবন্দরে একটি কার্যকরী পুলিশ ইউনিটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ জন্য পৃথক বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত নতুন এই ইউনিট এখন গেজেটে হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

x