চূড়ান্ত বিচারে মাইনাস করার ক্ষমতা আল্লাহ’র
ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকার আমাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে চায়। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে মাইনাস করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, জোর করে ক্ষমতায় আসা সরকারের দেশ পরিচালনার কোন অধিকার নেই। মিথ্যা মামলায় অস্থায়ী আদালতে আমি হাজিরা দিতে যাবার সময় আমার ওপর সশস্ত্র হামলা হয়। এদের ছবিসহ পত্রিকায় ছাপা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বেগম জিয়া বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পরিণত হয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রহসনে। শতকরা ৯৫ জনের বেশি ওই নির্বাচন বর্জন করে। যারা নতুন ভোটার হয়েছিল তারও ভোট দিতে পারেনি। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সংবিধান পরিবর্তন করে দেশে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করেছে। এতে জনগণের ওপর স্বৈরশাসন চেপে বসেছে। জাতীয় সংসদ বিরোধীদল শূন্য হয়ে পড়েছে।
তিনি আরো বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্র নেই। সবাই নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এ সংকট শুধু বিএনপির একার নয়। তাই সবাইকে আন্দোলনে আসার আহ্বান জানিয়ে খালেদা বলেন, তাহলেই জনগনের বিজয় অনিবার্য।
বিচার বিভাগকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের জন্য তারা চেষ্টা করছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। দেখামাত্র গুলি করছে।
ছাত্রলীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে এখন আতঙ্কের জনপদের নাম বাংলাদেশ।
র্যাব ও পুলিশের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এদের কোন কোন কর্মকর্তা এখন দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করছে। র্যাব সরকারের ভাড়াটিয়া খুনি হিসেবে কাজ করছে।
গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়লে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে জানিয়ে খালেদা বলেন, কুইক রেণ্টাল বিদ্যুত কেন্দ্র, পদ্মা সেতু রেলের কালো বেড়ালসহ বিভিন্নভাবে দুর্নীতির হাজার হাজার কোটি ডলার দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে।
এ সময় সরকারের উদ্দেশে ৭ দফা প্রস্তাব রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসন। উত্থাপিত প্রস্তাবগুলো হলো- জাতীয় সংসদের নির্বাচন অবশ্যই একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে হবে। যাতে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সকল পক্ষের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সুযোগের সমতা নিশ্চিত হয়।
নির্বাচন ঘোষণার আগেই প্রতিদ্বন্দ্বী সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ, দক্ষ, যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হবে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর সম্মতিক্রমে গঠিত নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
নির্বাচনের উপযোগী শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে তারিখ ঘোষণার পরপরই বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করতে হবে।
নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরুর আগেই চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষপাতদুষ্ট ও বিতর্কিত হিসেবে চিহ্নিত সদস্যদের সকল গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে প্রত্যাহার এবং কর্তব্যপালন থেকে বিরত রাখতে হবে।
সকল রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাসমূহ প্রত্যাহার করতে হবে।
বর্তমান সরকারের আমলে বন্ধ করে দেয়া সকল সংবাদপত্র ও স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল খুলে দিতে হবে। মাহমুদুর রহমানসহ আটক সকল সাংবাদিককে মুক্তি দিতে হবে।