বই উৎসবে শিক্ষার্থীরা, হেরেছে হরতাল

ঢাকা: হরতাল উপেক্ষা করে কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে জড়ো হাজারও কচিমুখ; সঙ্গে মা-বাবারাও।

নতুন বছরের (২০১৫) প্রথম দিন নতুন বই পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। বেলুন আর কাঠির মাথায় বাঁধা রঙিন রেশমি ফিতা উড়িয়ে উৎসব হলো শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় মতিঝিল বালক সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও মতিঝিল বালিকা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় পাঠ্যপুস্তক উৎসবে মেতেছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা।

এর আগে থেকেই শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা উৎসবে আসেন। গত সাত বছর ধরে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে সরকার ১ জানুয়ারি ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব’ হিসেবে উদযাপন করে আসছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০ ডিসেম্বর গণভবনে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য নতুন বই তুলে দিয়ে পাঠ্যপুস্তক উৎসবের উদ্বোধন করেন।

বৃহস্পতিবার সারাদেশের স্কুলে স্কুলে উদযাপিত হচ্ছে, এই উৎসব।

কেন্দ্রীয়ভাবে এই উৎসবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

হরতালের মধ্যেও উৎসবে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের উপস্থিতিতে মাঠ ভরে গেছে জানিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যারা দেশের উন্নতি চায় না, তারা আজ হেরে গেছে। আমি সারাদেশে খবর নিয়েছি, সবখানেই উৎসব হচ্ছে।

এবার প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার ৩৭৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৩টি বই তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

সব মিলিয়ে ১৫৫ কোটি ৮৩ লাখ ৫৬ হাজার ১২৩টি বই বিতরণ করা হলো।

পৃথিবীর কোনো দেশে এত বিশাল সংখ্যক বই বিনামূল্যে দেওয়া হয় না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এটা কেউ বিশ্বাসও করতে চায় না। কিন্তু আমরা বিনামূল্যে বই তুলে দিচ্ছি।

শিক্ষার্থীদের বেশি ও কঠিন কঠিন বই দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আপনাদের সন্তান একটি, আর আমার সঙ্গে চার কোটি। তাদের আধুনিক যুগের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

সভাপতির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিশ্বে আমাদের উপযোগিতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষায় বেশি বিনিয়োগ করছি। এটাই শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ, বড় বিনিয়োগ।

এরপর শিক্ষামন্ত্রীদ্বয় কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেন।

নতুন বই হাতে পেয়ে হাজার হাজার শিশু শিক্ষার্থীরা আনন্দে চেচিয়ে ওঠে। নতুন বইয়রে গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে তাদের মন।

উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা ফোম আর জরি উড়িয়ে হাততালি দিয়ে বই উঁচিয়ে পালন করলো এই উৎসব।

শিক্ষার্থী নাসিফ চৌধুরী ও ফাহিম মুনতাসির বলে, নতুন বই পেয়ে খুব খুশি লাগছে। আরো ভালো লাগছে আমাদের স্কুলে শিক্ষামন্ত্রী বই দিচ্ছেন বলে!

হরতালে স্কুলে আসতে সমস্যা হয়েছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তারা জানায়, আজকে পথে খুব জ্যাম ছিল।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব কাজী আকতার হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আলমগীর।

এছাড়াও মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এবারের বিশেষত্ব:
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, এবারই প্রথমবার নবম শ্রেণীতে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, ক্যারিয়ার শিক্ষা এবং অষ্টম শ্রেণীতে কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা চালু করা হয়েছে।

জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে জাতীয় শিক্ষাক্রমের সঙ্গে মাদ্রাসা স্তরের বইয়ের সঙ্গতিবিধান রাখা হয়েছে। প্রথমবারের মতো ইবতেদায়ি স্তরের সব বই চার রঙে মুদ্রণ করা হয়েছে।

x