রাতের আঁধারে কাটা হচ্ছে টাঙ্গুয়ার হিজল-করচ

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার রামসার সাইট ও প্রাকৃতিক অ্যাকুরিয়াম খ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রকৃতি বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে। সম্প্রতি রাতের অন্ধকারে প্রায় অর্ধশতাধিক হিজল ও করচ গাছ কেটে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সুন্দরবনের পর দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট এই টাঙ্গুয়ার হাওর। এ হাওর এলাকার সোলেমানপুর থেকে জয়পুর গোলাবাড়ি রনচি পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে সারি সারি হিজল-করচের বাগান। হাওরে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ থাকে হিজল-করচের বাগান।
গত বুধবার রাতে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা কোন এক সময় বিভিন্ন অংশের হিজল-করচ বাগানের ছোটবড় বেশকিছু গাছ কেটে নিয়ে গেছে বলে জানা যায়।
হাওরপাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, টাঙ্গুয়ায় প্রতিবছরই পাখিদের প্রজননের অভয়ারণ্য এই সারি সারি হিজল-করচ শোভিত অবৈধভাবে উজাড় হচ্ছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এখানকার পাখি, মাছ ও জলজ প্রাণী। তাছাড়া সাম্প্রতিককালে পর্যটকদের আনাগোনা অনেক বেড়েছে, যাদের অনেকেই বিভিন্ন প্লাস্টিক বর্জ্য পানিতে ফেলছেন। প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের নজরদারির অভাব থাকায় নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এই রামসার সাইটের প্রকৃতি।

অভিযোগ আছে, টাঙ্গুয়ার হাওরে ৪টি আনসার ক্যাম্প (মুজরাই, গোলাবাড়ি, রামসিংহপুর, রংসী) থাকলেও তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেনা। ফলে গত তিনবছর ধরে প্রায়ই গাছ কেটে সাবাড় করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এছাড়া হাওর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কমিউনিটি গার্ডের সদস্য, ম্যাজিস্ট্রেটের নৌকার মাঝি, এবং স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাই কৌশলে এসব অনিয়মে সহযোগিতা করছে। লোকদেখানো অনেক পদক্ষেপ নেয়া হলেও অসাধু একটি চক্রের লাগাম টেনে ধরা হচ্ছেনা।
স্থানীয় বাসিন্দা নিরব আহমেদ বলেন, হাওরে এই গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া দেখে অবাক হয়েছি। হাওরের সুরক্ষা ও জীববৈচিত্র রক্ষায় প্রশাসনের কঠোর নজরদারী প্রয়োজন।
হাওর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা জানান, হাওর তদারকির জন্য সাধারণত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করেন। কিছুদিন ধরে ম্যাজিস্ট্রেট নেই। আর সীমিতসংখ্যক আনসার সদস্য নিয়ে পুরো হাওর তদারকি করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।

গাছ কাটার সত্যতা নিশ্চিত করে তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রায়হান কবির জানান, আমি সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি দেখেছি। এভাবে নির্বিচারে গাছ কাটা খুবই নিন্দনীয় একটি কাজ। যে বা যারা এতে জড়িত, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। প্রশাসনের নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।
আশির দশকে তাহিরপুরের জয়নাল আবেদিন নামের এক বৃক্ষপ্রেমিক সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে প্রায় এক লাখ হিজলের চারা লাগিয়েছিলেন এই হাওরে। শিমুলবাগানের শিমুল গাছও রোপণ করেন তিনিই। জয়নাল আবেদিনের লাগানো হিজল-করচের চারাগুলোই এখন দৃষ্টিনন্দন বাগানে রূপ নিয়েছে। প্রাকৃতিকভাবেও জন্ম নিয়েছে অনেক গাছ। এসব গাছ কেটে হাওরের সৌন্দর্য নষ্ট করার বিষয়টি কঠোরভাবে দমন করতে হবে বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।
সুনামগঞ্জমিরর/তাহিরপুর/জেএবি/টিএম