২০২১ সালে কাঁদিয়ে চলে গেছেন যেসব তারকা

আর মাত্র দুই দিন বাকি। বিদায় নেবে ২০২১ সাল। নতুন বছর ২০২২ সালকে নিয়ে এখন সবার ভরসা নির্ভর করছে। ২০২১ সালে করোনার প্রকোপ কিছুটা কাটিয়ে অনেকে দেখেছেন আশার আলো। আবার অনেকের আলো নিভে গিয়েছে চিরতরে। এই বছরই বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় অভিনেতা–অভিনেত্রীকে হারিয়েছে দেশ।
২০২১ সালে আমরা চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি যেসব তারকা ও গুণী মানুষ:

এ টি এম শামসুজ্জামান
আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান (এটিএম শামসুজ্জামান) চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি মারা যান। পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা নিয়ে কয়েক মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠার পর সূত্রাপুরের নিজ বাসভবনে নেওয়া হলে সেখানে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
একজন অভিনেতা, পরিচালক ও লেখক হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন এটিএম। অভিনয়ের জন্য আজীবন সম্মাননাসহ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ছয় বার। এর মধ্যে দায়ী কে? (১৯৮৭) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে; ম্যাডাম ফুলি (১৯৯৯), চুড়িওয়ালা (২০০১) ও মন বসে না পড়ার টেবিলে (২০০৯) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা বিভাগে এবং চোরাবালি (২০১২) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্বঅভিনেতা বিভাগে পুরস্কার পান। ৪২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আয়োজনে তিনি আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন। শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৫ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন নন্দিত এ অভিনেতা।
সারাহ বেগম কবরী
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী মারা যান চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল। করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।

চট্টগ্রামের মেয়ে কবরীর পারিবারিক নাম মিনা পাল। ১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় কবরীর। ১৯৬৫ সালে অভিনয় করেন ‘জলছবি’ ও ‘বাহানা’য়, ১৯৬৮ সালে ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘আবির্ভাব’, ‘বাঁশরি’, ‘যে আগুনে পুড়ি’। ১৯৭০ সালে ‘দীপ নেভে নাই’, ‘দর্পচূর্ণ, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘বিনিময়’ ছবিগুলো। ১৯৭৩ সালে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছবিতে তার অভিনয় দর্শকদের স্মৃতিতে এখনো অমলিন। ১৯৭৫ সালে নায়ক ফারুকের সঙ্গে ‘সুজন সখী’ ছবিতে অভিনয় করে ছাড়িয়ে যান আগের সব জনপ্রিয়তাকে। পরের গল্পটা শুধুই এগিয়ে যাওয়ার। ষাট ও সত্তরের দশকের তুমুল জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা কবরী রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সবশেষ সরকারি অনুদানের ‘এই তুমি সেই তুমি’ চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন ঢাকাই ছবির এ ‘মিষ্টি মেয়ে’।

ফকির আলমগীর
২০২১ সালের ২৩ জুলাই মারা যান বাংলাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর। করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
গণসংগীত ও দেশীয় পপ সংগীতে ফকির আলমগীরের ব্যাপক অবদান। তিনি ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৯৯ সালে সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। ফকির আলমগীর ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মো. হাচেন উদ্দিন ফকির, মা বেগম হাবিবুন্নেসা। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে শিল্পী একজন শব্দসৈনিক হিসেবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন।

মিতা হক
২০২১ সালের ১১ এপ্রিল মারা যান রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী মিতা হক। প্রথমে করোনা আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেও কদিন বাদে হার্ট অ্যাটাক হয় মিতা হকের। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
ওয়াসিম
ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের জনপ্রিয় নায়ক ওয়াসিম চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭১ বছর বয়সে মারা যান গত ১৮ এপ্রিল। এক সময় রাজকীয় সিনেমা মানেই ছিল ওয়াসিমের সরব উপস্থিতি ছিল। ১৯৭৩ সালে মহসিন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’ সিনেমায় নায়ক হিসেবে প্রথম অভিনয় করার পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কখনো অ্যাকশন, কখনো ফোক, আবার কখনো রোমান্টিক- সব ঘরানার সিনেমায় নিজেকে যোগ্য নায়ক হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন তিনি।

জানে আলম
জানে আলমের একটি গান খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। গানটি হচ্ছে ‘একটি গন্ধমেরও লাগিয়া’। এ ছাড়া, আরও অসংখ্য গান করে মানুষের মন জয় করে নিয়েছিলেন শিল্পী হিসেবে। গত ২ মার্চ তিনি পৃথিবীর মায়া ছেড়ে বিদায় নেন।
রাবেয়া খাতুন

চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি একুশে পদক বিজয়ী বাংলাদেশি লেখিকা রাবেয়া খাতুন মারা যান। বেশ কিছুদিন বাধ্যর্কজনিত রোগে ভুগে বনানীতে নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
শাহীন আলম

চলতি বছরের ৮ মার্চ মারা যান চলচ্চিত্র অভিনেতা শাহীনূর আলম শাহীন (শাহীন আলম)। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও ডায়াবেটিস রোগে ভুগে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর।
ইন্দ্র মোহন রাজবংশী
ইন্দ্রমোহন রাজবংশী ৭ এপ্রিল ২০২১ মার যান। তিনি একজন বাংলাদেশী লোকগানের শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালী, জারি, সারি, মুর্শিদি ইত্যাদি গাইতেন। পাশাপাশি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীও ছিলেন।
ড. ইনামুল হক

নাট্যকার ও অভিনেতা ড. ইনামুল হক ১১ অক্টোবর ঢাকায় মারা যান। ফেনীর সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে ১৯৪৩ সালের ৭ মার্চ জন্ম ইনামুল হকের। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন।যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি শেষ করে ১৯৬৫ সালে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) রসায়ন বিভাগে। ১৯৮৭ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি।
মাহমুদ সাজ্জাদ

কলেজ জীবন থেকেই মঞ্চনাটকে যুক্ত ছিলেন মাহমুদ সাজ্জাদ। তারপর টেলিভিশন নাটকেও ব্যস্ততা বাড়িয়ে দেন। টেলিভিশনে তার অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘সকাল-সন্ধ্যা’। এরপর তিনি সহস্রাধিক নাটকে অভিনয় করে দর্শক মন জয় করেন। এ বছরে ২৪ অক্টোবর বেলা সাড়ে তিনটায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
এছাড়া, ‘ঢাকা ৮৬’ খ্যাত চলচ্চিত্রকার শফিকুর রহমান, ‘দেবদাস’ সিনেমার প্রযোজক কামরুল, বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আনোয়ারার স্বামী মহিতুল ইসলাম, অভিনেতা শামীম ভিস্তি, নৃত্য পরিচালক সুমন রহমান, কাইয়ুম চৌধুরীর স্ত্রী শিল্পী তাহেরা চৌধুরী, সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদ, নাট্যপরিচালক ও অভিনেতা কায়েস চৌধুরী এ বছর পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন।
ইত্তেফাক/সুনামগঞ্জমিরর/এসএ