ভালোবাসার দোলা ঋতুরাজ বসন্তে

‘কোকিল ডাকুক আর না ডাকুক’, ‘ফুল ফুটুক আরনা-ই ফুটুক আজ বসন্ত।’ ফুল ফোটার পুলকিত এইদিনে বন-বনান্তে, কাননে কাননে পারিজাতেররঙের কোলাহলে ভরে উঠবে চারদিক। আজ সোমবার, পয়লা ফাল্গুন। ঋতুরাজবসন্তের প্রথম দিন। বিপুল ঐশ্বর্যের অধিকারী ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার দিন।
রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘আজিদখিন-দুয়ার খোলা/ এসো হে, এসো হে,এসো হে আমার বসন্ত এসো…। ’বসন্ত জাগিয়ে তোলে ভালোবাসার বোধ,দেয় মিলনের বার্তা। এমন লগ্নে প্রিয়জনেরকাছে দেহ মন সঁপে দিতে ইচ্ছা জাগে।কালজয়ী কণ্ঠশিল্পী আব্বাস উদ্দীনেরআবেগী কণ্ঠের ভাষায়, ‘সুখ বসন্ত দিল রেদেখা, আর তো যৈবন যায় না রাখা গো…। ’বসন্ত বাতাস ভাটি বাংলার বাউল আবদুল করিমকেওজাগিয়ে তোলে। উতলা বাউল তাই গেয়েওঠেন, ‘বসন্ত বাতাসে সই গো/ বসন্তবাতাসে/ বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়িআসে…।’ এভাবে বসন্ত এলে মন আনচানকরে। পুরনো বেদনা, হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিভালোবেসে আবার তার পেছনে ছুটতেইচ্ছা করে।বসন্ত মানেই পূর্ণতা।
বসন্ত মানেই নতুনপ্রাণের কলরব। কচিপাতায় আলোর নাচনেরমতোই বাঙালির মনেও লাগবে দোলা। বিপুলতরঙ্গ প্রাণে আন্দোলিত হবে বাঙলি মন।বাঙালি জীবনে বসন্তের আগমন বার্তা নিয়েআসে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানোএকুশে ফেব্রুয়ারি। এ বসন্তেই ভাষাআন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতারবীজ রোপিত হয়েছিল। বসন্তেই বাঙালিমুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল। তাই কেবল প্রকৃতি আরমনে নয়, বাঙালির জাতীয় ইতিহাসেও বসন্তআসে এক বিশেষ মাহাত্ম্য নিয়ে। বসন্ত হয়েউঠেছে অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক অনন্যউৎসব।
প্রকৃতিতে ফাল্গুনের হাওয়া, বাতাসে বসন্তের উন্মাদনা। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতি সেজেছে বর্ণিল সাজে। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা। প্রকৃতিও আগুনরঙা ভালোবাসার রঙে নিজেকে রাঙিয়ে নিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকৃতি জানান দিচ্ছে আজ পহেলা ফাল্গুন।

ফাল্গুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। সেই সঙ্গে গানে আর অনুভূতিতে একইদিনে এসেছে ভালোবাসা দিবস। ঋতুরাজের হাত ধরে এসেছে ভালোবাসার দিনটি। তাইতো ঋতুরাজ বসন্তে ভালোবাসার দোলা দিচ্ছে সবার অন্তরে অন্তরে।
একদিকে বাসন্তী রঙ, অন্যদিকে ভালোবাসার রঙের জোয়ারে প্রকৃতি একাকার আজ। বাসন্তী ফাগুণের আমন্ত্রণে উপস্থিত হয়েছে ভালোবাসার বিশেষ দিন।
ফাগুনের আগুনে, মন রাঙিয়ে বাঙালি তার দীপ্ত চেতনায় উজ্জীবিত হচ্ছে আজ। বাসন্তী রঙের শাড়ি, কপালে টিপ, হাতে চুড়ি, পায়ে নূপুর, খোঁপায় ফুল অথবা রিং জড়িয়ে আজ বেরিয়ে পড়বেন তরুণীর দল। প্রকৃতির সঙ্গে নতুন সাজে সাজবেন তারাও। তাদের উচ্ছ্বাস মনে করিয়ে দেয় কবির কবিতার লাইন ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক, আজ বসন্ত’।
গত দুই বছরের মতো এবারও ঋতুরাজের হাত ধরে এসেছে ভালোবাসা দিবস। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। যদিও ভালোবাসা ক্ষণিকের নয়, ভালোবাসা চিরন্তন। ভালোবাসা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার নয়- শুধু স্বামী-স্ত্রীর নয়, এই ভালোবাসা বয়সের ফ্রেমে বাঁধা নয়, এটা প্রসারিত হয় বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজনসহ সবার মাঝেই।
তবে ভালোবাসা দিবস যুগলদের মনের উচ্ছ্বাসকে বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। ভালোবাসার গানে, ভালোবাসার মহানুভূতির কাছে নিজেকে নিশ্চিন্তে সঁপে দিতেই ভালোবাসার বিশেষ দিবস, ভালোবাসা দিবস। পৃথিবীব্যাপী আজকের এই দিনটি সব যুগলের জন্যই বিশেষ।
বাংলা একাডেমির সংস্কার করা বর্ষপঞ্জির হিসাবে ফাল্গুনের প্রথম দিনটি মিশেছে ভালোবাসার দিনে। ঋতুরাজ বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস বাঙালির মনের ভালোবাসা আর উচ্ছ্বাসের কোনো কমতি রাখেনি। এই দিনে প্রায় সবার হাতে হাতেই সৌন্দর্য আর ভালোবাসার প্রতীক ফুল শোভা পায়।

আগে প্রতিবছর ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত উৎসব পালিত হত। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সঙ্গে জড়িত ঐতিহাসিক দিবসগুলোকে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সাথে সমন্বয় করার জন্য বাংলা ক্যালেন্ডার পরিবর্তন করা হয় দু’বছর আগে। আর তাতেই বদলে যায় বসন্ত উৎসবের তারিখ। ১৪২৬ বঙ্গাব্দ থেকে বাংলা ফাল্গুন মাসের প্রথম দিনটি চলে যায় ১৪ ফেব্রুয়ারিতে।
ইংরেজি বর্ষপঞ্জির ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে পরিচিত সারা বিশ্বে। বাংলাদেশেও দিবসটি ঘিরে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে তরুণ প্রজন্মের।
সাদিকুল আলম/যুগ্ম-সম্পাদক/সুনামগঞ্জমিরর