সিলেটে এক মাসের ব্যবধানে আবারও বন্যা, দুর্ভোগ

সিলেটে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। টানা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলছে ভারী বৃষ্টি। সেই সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে একাধিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় তিন লাখ মানুষ।
গত কয়েক দিনের মতো বুধবার (১৫ জুন) ভোর থেকেও অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। এতে পানি ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই মধ্যে সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার তিন শতাধিক প্রাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়ে পড়েছে। গোয়াইনঘাটে বন্যার্তদের জন্য ৪৪ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এর আগে গত ১০ মে থেকে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিলেন। সেই সময়ে সিলেট নগরেও বিপুল সংখ্যক মানুষ পানিবন্দি ছিলেন। শুরু হয় দুর্ভোগ। আর সেই দুর্ভোগের রেশ না কাটতেই আবারও নতুন করে বন্যার কবলে পড়েছেন মানুষ। গোয়াইনঘাট উপজেলায় বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ৪০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
এদিকে, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর দুটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর তীরবর্তী নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে ইতিমধ্যে পানি প্রবেশ করেছে। নগরীর পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত কালিঘাট ও মহাপট্টিতে নদী তীরবর্তী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আবারও বন্যার পানি ঢুকছে।
সিলেটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সকাল ৯টায় সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্টে দশমিক ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে কুশিয়ারা নদী ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে দশমিক ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সারিঘাটে সারি নদী বিপদসীমার দশমিক ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে, গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের সঙ্গে সবকটি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নিম্নাঞ্চলের ৯০ শতাংশ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এই উপজেলার সদর, পূর্ব ও পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলং, পূর্ব ও পশ্চিম আলীর গাও, রুস্তুমপুর, তোয়াকুল, লেংগুড়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফা বন্যায় বিপুল সংখ্যক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, বন্যা কবলিত এলাকায় ৪০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আরও জানান, বন্যার্তদের জন্য প্রশাসন থেকে ৪৪ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ও পশ্চিম, চতুল, সদর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ জুন) রাত থেকে কানাইঘাট পৌর শহরের পূর্ব বাজারে পানি প্রবেশ করায় অনেক দোকানপাট তলিয়ে গেছে। সীমান্তবর্তী আরেক উপজেলা জকিগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলোতে শত শত মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
সীমান্তবর্তী কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়া পাশাপাশি রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী জানান, উপজেলা সদরের রাস্তায় পানি উঠেছে। এ উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সুনামগঞ্জমিরর/এসএ